নীলফামারীতে স্ত্রী ও শিশু দুই সন্তানকে হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করে বেঁচে যান আশিকুল মোল্লা বাবু নামের এক পাষন্ড। পরে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে বাড়ির ঘরের ভেতরে একটি বিছানায় পড়ে থাকতে দেখা যায় ওই পাষন্ডের স্ত্রী ও দুই মেয়ের মরদেহ।
আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীরা কেউ ঘটনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন ধারণা দিতে পারেননি। এছাড়াও একই বিছানায় মরদেহ তিনটি পাশাপাশি রাখায় পুরো হত্যাপ্রক্রিয়া নিয়েও তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা কল্পনার।
গুরুতর জখম আশিকুল হক মোল্লা সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আবদুর রউফ মোল্লার ছেলে। তিনি কাঠের আসবাবপত্রের ব্যবসা করেন।
বর্তমানে ওই পাষন্ড রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
নিহতরা হলেন- আশিকুলের স্ত্রী তহুরা বেগম (৩৫), তাদের বড় মেয়ে আয়েশা আক্তার তানিয়া (১১) ও ছোট মেয়ে জারিন আক্তার (৬)।
আশিকুলের ছোট বোন সাথী আক্তার (২৭) বলেন, ভাই দীর্ঘ ৬ মাস ধরে কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। শ্বশুড়বাড়ি থেকে আমি প্রতি সপ্তাহে এসে ভাইয়ের খোঁজখবর নিয়ে যেতাম। বৃহস্পতিবার ভাবির সাথে আমার কথা হয়েছিল, ভাবি জিজ্ঞেস করেছিল- কখন আসবে। আমি ভাবিকে বলেছিলাম, শুক্রবার সকালে যাব।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার সকালে মোবাইল ফোনে খবর পাই- ভাবি ও আমার দুই ভাতিজি আর বেঁচে নেই, ভাইকে গলাকাটা অবস্থায় রংপুরে নেওয়া হয়েছে। এরপর এখানে এসে লোকজনের কাছে শুনি, ভাবি ও তার দুই মেয়েকে হত্যা করে গলাকেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ভাই। কী কারণে এবং কেন এমন ঘটনা ঘটাল তার কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পাঁচ্ছি না।
এদিকে শুক্রবার রাতে নীলফামারী সদর থানায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার অভিযোগে আশিকুল হক মোল্লাকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নীলফামারী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে নিহত গৃহবধুর ভাই আসাদুজ্জামান নূর আসাদ বাদী হয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা ও আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশি পাহারায় গুরুতর জখম আশিকুল হক মোল্লা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের দাঁড়োয়ানী বন্দর বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীরা খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। বিষয়টি রহস্যজনক হওয়ায় রংপুর সিআইডি ক্রাইম সিনকে খবর দেওয়া হয়।
পরে বেলা পৌনে তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করেন সিআইডি ক্রাইম সিনের সদস্যরা। বিকেল চারটার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নেয়। এ সময় বিছানার পাশে সবজি কাঁটার রক্তাক্ত চাকু (কাঁটারি) উদ্ধার করে পুলিশ।