নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে জনগণের নাভিশ্বাস উঠছে এরই ভিতর ওয়াসা থেকে ঘোষণা এসেছে পানির মূল্য বৃদ্ধির। ওয়াসার ঘোষণা থেকে জানা যায়, শ্রেণিভেদে পানির দাম ২৫ থেকে ১৪৯ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ওয়াসাতে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীর গ্রাহকদের পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করে এবার পানির দাম নির্ধারণ করা হবে। নিম্ন, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত- এ পাঁচ শ্রেণিকে আলাদা আলাদা দামে পানি সরবরাহ করবে ওয়াসা। দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড-২০০০ অনুসরণ করা হবে। অর্থাৎ যিনি যত বেশি বর্গফুট আয়তনের বাড়িতে থাকেন, তাকে তত বেশি বিল পরিশোধ করতে হবে। যারা ২৫০০ বর্গফুট আয়তনের বাসায় থাকেন তাদের উচ্চবিত্ত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৫০০ থেকে ২৫০০ বর্গফুটের কম আয়তনের বাসায় যারা বসবাস করছেন তারা উচ্চ মধ্যবিত্ত। ১০০০ থেকে ১৫০০ বর্গফুটের কম আয়তনের বাসায় যারা বসবাস করছেন তারা মধ্যবিত্ত এবং ১০০০ বর্গফুট আয়তনের নিচের বাসায় যারা বসবাস করছেন তারা নিম্নবিত্ত। আর বস্তিবাসীদের নিম্ন আয়ের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে ওয়াসার প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, গ্রাহক যে দামে বর্তমানে পানি পাঁচ্ছে তার চেয়ে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। ভর্তুকি দেওয়ার মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে পানি দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি এক হাজার লিটার পানিতে ঢাকা ওয়াসাকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে প্রায় ১০ টাকা। মূলত ভর্তুকি কমাতেই পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু দাম বাড়ানোর আগে ঢাকা ওয়াসাকে সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সংস্থাটি ঢাকার বাসিন্দাদের যে পানি সরবরাহ করছে, তা না ফুটিয়ে খাওয়া যায় না। এ ছাড়া অনেক এলাকায় পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ থাকারও গুরুতর অভিযোগ আছে। সরবরাহকৃত পানি বেশিরভাগ সময়ই থাকে দুর্গন্ধযুক্ত বা কালো রঙের ফলে তা ব্যবহার হয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ। দীর্ঘ সময় ধরে ফোটানো হলেও কিছু এলাকায় সরবরাহকৃত পানি থেকে দুর্গন্ধ যাচ্ছে না, তা পান যোগ্যও করা যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির ১৫ শতাংশ আসে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার থেকে। শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা থেকে পানি এনে শোধন করে তা নগরবাসীর জন্য সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এ দুই নদীর পানি এতটাই দূষিত যে তা শোধন করেও পানযোগ্য করা যাচ্ছে না। ওয়াসার পানি ব্যবহার অযোগ্যর আরেকটি কারণ হলো পয়ঃনিষ্কাশন লাইন ওই পানির লাইন একই স্থানে স্থাপিত হওয়ার করণে এতে করে দেখা যায় পয়ঃনিষ্কাশনের পানি ওয়াসার পানির সাথে মিশে তা ব্যবহার অযোগ্য করে তুলছে। তাই এমতাবস্থায় কোন ভাবেই পানির মূল্য বাড়ানো যুক্তিসঙ্গত নয়। সর্বোপরি পানির দাম বাড়ানোর আগে ওয়াসার সকল গ্রাহককে ব্যবহার যোগ্য পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।