১৯৫২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” আন্দোলন। সেই ভাষা সংগ্রামে পিছিয়ে ছিল না ঝিনাইদহ। আন্দোলনের ঢেউ আঁছড়ে পড়েছিল সেদিনকার তরুণ যুবকদের মাঝে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ছাত্রসমাজ, সাধারণ জনগন ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধারাবাহিক ভাবে একসাথে মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন করেছেন। মহান ভাষা আন্দোলনে ঝিনাইদহের যেসব ভাষা সৈনিক সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ভাষা সৈনিক হলেন নন্দ দুলাল সাহা। ৮৯ বছরেও তিনি এখনো নিজেই চলাফেরা করতে পারেন। কিন্তু দুঃখ তার একটাই প্রশাসনের কেউ অদ্যাবধি খোঁজ রাখেন না। রাষ্ট্রীয় ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও ভাতা চালু হলেও ভাষা সৈনিকদের সম্মান দেয়া হয়নি। অথচ স্বাধীনতার বীজ সুচিত হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। জানা গেছে, ভাষা সৈনিক নন্দ দুলাল সাহার বয়স যখন ৮০ তখন তার স্ত্রী মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন তিনি। এখন মানবেতর জীবন-যাপন করেন শহরের পার্ক পাড়ার বাড়িতে। ভাষা সৈনিক নন্দ দুলাল সাহার ৫ মেয়ে ও ২ ছেলে। সবাই যে যার মতো বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করায় এই বৃদ্ধ বয়সে একেবারেই তিনি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন। অসহায়েরমত এক বাড়িতে একাই থাকেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। অথচ তিনি স্বীকৃতি পাননি। ভাষা সৈনিক নন্দ দুলাল সাহা বলেন, ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি শহরের ছবিঘর সিনেমা হলের পাশে গোপনে পোস্টার লিখতেন। খবর পেয়ে সে সময়কার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এক কর্মকর্তা পা দিয়ে পোস্টার গুলো মাড়িয়ে নষ্ট করে দিয়েছিল। টগবগে তরুণ নন্দ দুলাল রাগে ক্ষোভে সেদিন পুলিশকে ঘুষি মেরে পালিয়ে গিয়েছিল। পুলিশ মারার কারণে তাকে অনেক দিন পালিয়ে থাকতে হয়েছিল দেশের বিভিন্ন স্থানে। ভাষা আন্দোলন সফল হলে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। যুদ্ধের সময় তার একটি হাতে গুলি লেগেছিল। যুদ্ধের সেই ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়ালেও কখনো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি আজ পর্যন্ত পাননি। অথচ জেলায় অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে সরকার নিয়মিত ভাতা দিচ্ছেন। প্রতিবেশি মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, খুবই কষ্টে আছেন ভাষা সৈনিক নন্দ দুলাল, তাকে কেউ দেখেন না। সরকারী ভাবে তার কোন অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে না। অথচ তিনি একাধারে ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। ভাষা সৈনিক নন্দ দুলাল সাহার আগামীর দিন গুলো যেন ভালো ভাবে কাটে আমরা সে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।