মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ) এর এক মাঠ সংগঠকের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করে গা-ঢাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী গ্রাহকরা ভীর করেছেন উপজেলা দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তার দপ্তরে। অভিযুক্ত ওই মাঠ সংগঠকের নাম ফারুক হোসেন। সে গজারিয়া উপজেলার আনারপরা,দড়িকান্দি, করিম খাঁ,গোসাইরচর,ফুলদী এলাকায় মাঠ সংগঠকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। সরেজমিনে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটায় গজারিয়া উপজেলা দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তার কার্যালয় সামনে গিয়ে দেখা যায় ৮/১০জন নারীর একটি জটলা। সামনে এগিয়ে তাদের কাছে এখানে জমায়েতের কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ)এর মাঠ সংগঠক ফারুক হোসেন কর্তৃক প্রতারণা শিকার হয়েছেন তারা। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে তারা এখানে এসেছেন। উপজেলা দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা মনির হোসেন তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। ভুক্তভোগী ভবেরচর ইউনিয়নের আনারপুরা গ্রামের ভাড়াটিয়া সোনিয়া আক্তার বলেন, নবজাতক সঞ্চয় স্কীমে টাকা জমা রেখেছিলেন তিনি। ওই এলাকার মাঠ সংগঠক ফারুক হোসেনের কাছে ৪১ হাজার টাকা জমা দিলেও বইয়ে উঠানো হয়েছে মাত্র ৩৩ হাজার টাকা। স্থানীয়দের মাধ্যমে তিনি সাম্প্রতি খবর পেয়েছেন ফারুক হোসেন পালিয়ে গেছে তাই তিনি উপজেলায় এসেছেন খোঁজখবর নিতে। তার প্রতিবেশী ফেরদৌসী আক্তারের সাথেও এরকম ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি। আরেক ভুক্তভোগী করিম খাঁ গ্রামের বাসিন্দা জরিনা বেগম বলেন, বিভিন্ন ক্যাটাগরির চারটি সঞ্চয় স্কীম রয়েছে তার। তার মধ্যে নবজাতক সঞ্চয় স্কীমের একটি বই মাঠ সংগঠক ফারুক হোসেন নিজের কাছে রেখেছিলেন। তিনি নিয়মিত টাকা জমা দিলেও ফারুক হোসেন সেটা বইয়ে তোলেন নাই। এছাড়াও ফারুক হোসেন বিভিন্ন সময়ে তার কাছ ধার হিসেবে টাকা নিয়েছেন তার অধিকাংশই তিনি পরিশোধ করেন নাই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য তিনি উপজেলা এসেছেন। আরেক ভুক্তভোগী বাঁশগাও গ্রামের নাছিমা আক্তার বলেন, স্থানীয় লোকজন বলাবলি করছে মাঠ সংগঠক ফারুক হোসেন সাধারণ গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছেন। যাবার আগে ফারুক হোসেন তার সঞ্চয় স্কীমের বই নিয়ে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা মোঃ মনির হোসেন বলেন, 'মাঠ সংগঠক ফারুক হোসেন ২০১৬ সালে এই উপজেলায় যোগদান করে। ২০২৩সালের মে মাসে তার বিরুদ্ধে ওঠা কিছু অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকা-ে তার জড়িত থাকার বিষয়ে প্রমাণ পাই আমরা। বিষয়টি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। ২০২৩সালের শেষের দিকে তাকে অন্যত্র বদলীর আদেশ দেওয়া হয়। বদলির আদেশ আসার পর আমরা তাকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বলি তবে সে গড়িমসি করতে থাকে। চলতি বছরের গত ২২ জানুয়ারি থেকে সে লাপাত্তা। দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে স্থানীয় লোকজন আমাদের অফিসে এসে উপস্থিত হচ্ছেন। সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জমা না দেওয়া, গ্রাহকদের বই নিজের কাছে রাখা এবং স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ফেরত না দেওয়া-সহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এখনো পর্যন্ত ১৫/১৬জন ভুক্তভোগী আমাদের অফিসে এসেছেন। তাদের কাছে পাওয়া তথ্য মতে এখনো পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে তবে প্রকৃত সংখ্যাটা আরো বেশি হতে পারে। আমরা খবর নিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাঠ সংগঠক ফারুক হোসেনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার আর মুঠোফোনে কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন বলেন, 'বিষয়টি আমি আপনাদের কাছ থেকে প্রথম জানলাম। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব'।