খাদ্যে ভেজাল এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, কোনো সচেতন মানুষের পক্ষে যে কোনো খাদ্যই স্বস্তির সঙ্গে খাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। আমরা সবাই জানি, সুস্বাস্থ্যই সকল সৌন্দর্য ও সুখের মূল। সুস্বাস্থ্য ছাড়া আমাদের সকল বৃথা। সুস্বাস্থ্যের জন্য চাই স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ খাদ্য। আবার খাদ্য মানসম্মত না হলে কিংবা ভেজাল বা দূষিত হলে সেই খাদ্যের কারণেই মানুষের মৃত্যু হতে পারে। হচ্ছেও তাই। বাংলাদেশে হাতের কাছে পাওয়া অনেক খাদ্যপণ্যেই রয়েছে তাৎক্ষণিক বা দীর্ঘমেয়াদি অসুখ এবং মৃত্যুর হাতছানি। শহর থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যেক গ্রামে চলছে খাদ্যের নামে বিষ বিক্রি। খোলা থেকে শুরু করে প্যাকেট জাত পযন্ত ভেজালের রাজত্ব। ১৬ কোটি মানুষ আজ ভেজাল খাদ্যের আতঙ্কে। গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, লিভার ও কিডনি অকেজো হওয়া, হৃদরোগ, স্নায়ু অকার্যকর হওয়া এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। এসবের জন্যও ভেজাল খাদ্য অনেকাংশে দায়ী। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উদ্যোগও অত্যন্ত সীমিত। গণমাধ্যমে খাদ্যের ভেজাল নিয়ে প্রতিনিয়ত খবর থাকছে। মানুষেরও কমবেশি সেসব জানা, কিন্তু করার কিছু নেই। খাবার তো খেতেই হবে। জানা যায়, মাছ ও দুধে ফরমালিন মেশানো হয়। ফলমূল পাকাতে ব্যবহৃত হয় কার্বাইড। চাল ও মুড়িতে ইউরিয়া মেশানো হয়। শুঁটকি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় নিষিদ্ধ ডিডিটি। গুঁড়া মসলা, চানাচুর ও রঙিন খাবারে ব্যবহার করা হয় শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কাপড়ের রং। পোকার আক্রমণ ঠেকাতে সবজিতে সরাসরি কীটনাশক স্প্রে করা হয় এবং কীটনাশক সক্রিয় থাকা অবস্থায় সেগুলো বাজারজাত করা হয়। অনেক সময় বাজারে আনার আগেও কীটনাশক মেশানো পানিতে সবজি চুবিয়ে নেওয়া হয়, যাতে পোকা থাকলে মরে যায়। মুরগির খাবার কিংবা মাছের খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ট্যানারির বর্জ্য। সেই খাবারে ক্রোমিয়ামসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ থাকে। মাছ বা মাংসের মাধ্যমে সেগুলো মানবদেহে চলে আসে। থাকে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি। দেশের নিরীহ মানুষ ভেজালের বিষে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে অকালে। তাই এই ব্যবসায়ীদের কঠোর হস্তে দমন করে আইনের আশ্রয়ে নিয়ে আসতে হবে। দেশের মানুষকে ভেজালের বিষবাষ্প থেকে রক্ষা করতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তবে সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা প্রত্যেকে যদি যার যার স্থান থেকে সোচ্চার ও সচেতন হই, নিজে খাদ্যে ভেজাল না মেশাই এবং অন্যকেও ভেজাল না মেশাতে নিরুৎসাহিত করি তাহলে এই সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তাছাড়া খাদ্যসামগ্রী উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুত, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটা কাজে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই কড়া নজর রাখতে হবে। দেশের প্রত্যেকটা মানুষ নিরাপদ খাদ্য খেয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।