শেরপুরে এসএসসি পরীক্ষার হলে সময় মতো প্রশ্ন না দেয়া এবং সময়ের আগে উত্তরপত্র টেনে নেয়ায় প্রতিবাদে একটি পরীক্ষার কেন্দ্রে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান শুরু করলে জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে বাড়ি ফেরে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় দুই শিক্ষককে পরীক্ষার পর্যবেক্ষণ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শেরপুর মডেল গার্লস স্কুল কেন্দ্রের ২০১ নম্বর কক্ষে প্রশ্নপত্র সকাল দশটায় দেয়ার কথা থাকলেও বহুনির্বাচনী প্রশ্ন দেয়া হয়েছে ১৭ মিনিট পর। এদিকে একইসঙ্গে লিখিত উত্তরপত্র দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়েছে সাড়ে দশটার পর এবং লিখিত প্রশ্ন দেয়া হয়েছে ১০টা ৫২ মিনিটে। এই কেন্দ্রের ২০১ নম্বর কক্ষে শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও আতিউর রহমান মডেল গার্লস স্কুলের ৪৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ বিষয়ে পরীক্ষার কক্ষে সময় বাড়িয়ে দেয়ার কথা থাকলেও উত্তরপত্র টেনে নেয়া হয়েছে ঠিক একটার সময়। পরীক্ষা চলাকালে পর্যবেক্ষক শাহাদাৎ হোসেন এবং নাজির আহমেদের অসৌজন্যমূলক আচরণেরও বিচার দাবী করেন পরীক্ষার্থীরা। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পরীক্ষার শেষে কেন্দ্রে বিক্ষোভ করেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ সময় কেন্দ্র বাতিলের দাবীতে কেন্দ্রে অবস্থান করেন তারা। পরে বিকেল পৌনে চারটার দিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বাড়িতে ফেরেন। ২০১ নম্বর কক্ষের পরীক্ষার্থী ও শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তুষি বলেন, আমাদের আধাঘণ্টা নষ্ট হয়েছে পরীক্ষার হলে। আমাদের বাড়তি সময়ও দেয়া হয়নি। আমাদের প্রস্তুতি ভালো থাকলেও আমরা সময়ের অভাবে লিখতে পারি নাই। আমরা এই কেন্দ্র পরিবর্তন চাই এবং জড়িত স্যারদের অব্যাহতি চাই। আরেক শিক্ষার্থী আফরিন বলেন, স্যাররা খাতা ও প্রশ্ন দিয়েছেন দেরিতে। আমাদের ৩২ মিনিট সময় নষ্ট হয়েছে। যার কারণে আমরা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরগুলো ঠিকভাবে লিখতে পারি নাই। আমরা আমাদের ভালো রেজাল্টের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। স্যাররা আমাদের সঙ্গে তুই-তুকারিও করেছেন। এজন্য হলে অনেকেই কান্নাকাটি করেছে। আমাদের বাড়তি কাগজও উঠে গিয়ে আনতে হয়েছে। তারা এসে এগিয়ে দেয়নি। কেন্দ্র ভিত্তিক সমস্যা নিরসন, কক্ষ পরিদর্শক শিক্ষককে বাতিল এবং কেন্দ্র বাতিল করে অন্য কেন্দ্রে পরীক্ষা নেয়ার দাবী জানান অভিভাবকরাও। মাসুদ হাসান বাদল বলেন, আমরা দশ বছরের অপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষা দিতে পাঠিয়েছি। এখন স্যারদের অবহেলার কারণে তাদের রেজাল্ট বিপর্যয় হলে এর দায় কে নেবে? অভিভাবক শাহীন ইসলাম বলেন, পরীক্ষার হলের ঘটনায় আমাদের মেয়েরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা এই পরীক্ষা আবারো নেয়ার দাবী জানাই। যদি কোনো কারণে আমাদের মেয়েরা এই ঘটনায় আত্মহত্যা বা কোনো খারাপ কাজ করে ফেলে এর দায় এই স্কুলের কর্তৃপক্ষের নিতে হবে। এদিকে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে দ্রুত কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শেরপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. চাঁন মিয়া। তিনি বলেন, আমরা এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। সরাসরি সবাই অভিযোগ করেছেন। আমরা সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করছি। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে দুই শিক্ষককে পরীক্ষার পর্যবেক্ষণ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এবং তদন্ত করে দ্রুত শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্র সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের। শেরপুর -২ অঞ্চলের কেন্দ্র সচিব এ্যানি সুরাইয়া মিলোজ বলেন, আমরা আমাদের পর্যবেক্ষকদের আরও সচেতনভাবে কাজ করার তাগিদ দেব। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) রাজীব উল হক বলেন, ইতোমধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রের সকল দায়িত্ব থেকে ওই কক্ষের দুই জন শিক্ষককে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে দেখবো, আরও কারো দায়িত্বে অবহেলার বিষয় প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। একইসঙ্গে অভিভাবকদের লিখিত স্মারক লিপি দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তাদের লিখিত বক্তব্যের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সমাধান দেয়া হবে।