সামাজিক অস্থিরতার কারণে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে অপরাধ। স্বজনকে হত্যার পর লাশ টুকরা করে ফেলা হচ্ছে। প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটছে। সন্তানকে হত্যা করে নিজেই আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন মা। দল বেঁধে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন করে ভিডিও চিত্র ধারণ করা হচ্ছে। অসহায় তরুণীদের ফাঁদে ফেলে পাঁচারও করছে। কিশোর বয়সেই তুচ্ছ কারণে সমবয়সীকে হত্যা করছে কেউ কেউ। শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ পুঁতে রাখছে তার আত্মীয়। চলন্ত বাসে কর্মজীবী তরুণীকে আটকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করছে পরিবহনকর্মীরা। হামলার পর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নেচে উল্লাসও করছে কেউ কেউ। সম্প্রতি একের পর এক এমন হত্যা-নির্যাতনের নিষ্ঠুর ঘটনা তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। আবার একজন অপরাধী একটা অপরাধ করার পর সেটা ঢাকতে আরো একাধিক অপরাধ করছে। কেন বেড়েছে এই সামাজিক অস্থিরতা? এমন প্রশ্নের উত্তর হিসেবে, অপরাধ ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানসিক অস্থিরতা থেকেই এমন নৃশংস অপরাধ বাড়ছে। এছাড়াও মানসিক অস্থিরতা ও হতাশায় অনেক মানুষ হিংস্র, এমনকি আত্মঘাতী হয়ে উঠছে। সাইবারজগতে নেতিবাচক কর্মকা- এবং মাদকের প্রভাবে নতুন ধরনের অপরাধপ্রবণতা তৈরি হচ্ছে। নতুন অপরাধগুলোর অন্যতম কারণ অবাধ প্রযুক্তি প্রবাহের কারণে পর্নোগ্রাফি, টিকটকের মতো বিভিন্ন অপসংস্কৃতির প্রভাব। ফলে এখন আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি পরিবারসহ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নজরদারি প্রয়োজন।’ কেননা ‘নৈতিকতার অবক্ষয় ও মানসিক অস্থিরতা থেকে মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে। অসহিষ্ণু মানুষের মস্তিষ্কের বিচারিক সেলগুলোর কার্যকারিতা কমে যায়। তখন সে হিংস্র আচরণ করে। এ কারণে লাশ কেটে ফেলার মতো ঘটনা ঘটছে। নিজের অপরাধ ঢাকতে আরো বেশি নৃশংস হয়ে পড়ে অনেকে। তার বিচার-বিবেচনাবোধ কাজ করে না। নিয়মিত মাদক সেবন করলেও তার মস্তিষ্কের জাজমেন্টাল সেলগুলোর অ্যাক্টিভিটি কমে যায়।’ তাই সামাজিক অস্থিরতার অবসানে আগে অর্থনীতিতে সুস্থির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও দরকার ব্যাপক সংস্কার। রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বস্তরে জবাবদিহিতার পরিবেশ গড়ে তোলাও জরুরি। বলা হয়ে থাকে, রাজনীতি হলো অর্থনীতির প্রতিবিম্ব। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থেই দেশের অর্থনীতিতে সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে হবে। সহিংসতা প্রতিরোধে পরিবারকে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুকে ক্ষতিপূরণ দিতে আইনি কাঠামো ছাড়াও অপরাধ দমনে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় করার ওপর জোর দিতে হবে।