রাজধানী ঢাকা মহানগরীর বায়ু দূষণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করা সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালেও ঢাকা ছিল বিশ্বের সব চেয়ে দূষিত বায়ুর শহর। পর দিন ১৮ ফেব্রুয়ারিও ঢাকার বায়ু দূষণের অবস্থা খারাপ ছিল। অন্যদিকে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ দিনের মধ্যে ১১ দিনই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ুর শহর ছিল ঢাকা। এটা দিনে বা রাতে যে কোনো না কোনো সময় বায়ু দূষণের এ অবস্থায় ছিল। পরিবেশবিদরা বলছেন, বছর হিসেবে গড়ে তিন দিনে একদিন পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় দিনে বা রাতের কোনো না কোনো সময় শীর্ষে থাকছে ঢাকা। বিশে^ও ১০১ টি শহরের বায়ুদূষণের তথ্যের ভিত্তিতে আইকিউএয়ার বলেছে, ১৭ ফেব্রুয়ারি সাড়ে ন’টায় ঢাকার গড় বায়ুমান সূচক ছিল ২২৭, যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। কোনো শহরে দিনের কোনো সময় এ রকম পরিস্থিতি বিরাজ করলে সেখানকার মানুষের স্বাস্থ্যঝুকি তৈরি হয়, বিশেষ করে যারা শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায় ভুগছেন, তাদের তখন ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ কমাতে রাস্তার ধুলা নিয়ন্ত্রণে সরকারের জোরালো পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। রাস্তার ধুলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে মানুষ তাৎক্ষনিক ভাবে এর সুফল পাবে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, নিয়ম না মেনে অবকাঠামো নির্মাণ, ফিটনেস বিহীন গাড়ি চলাচল, বর্জ্য পোড়ানো, রাস্তায় নিয়মিত পানি না ছিটানো, ইটভাটার কালো ধোঁয়া ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য দায়ী মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকায় গড়ে ১০০টি রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলে। প্রতিদিন শহরে গড়ে ৫০ টি স্থানে বর্জ্য পোড়ানো হয়। শহরের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এসব কাজে নিয়ম না মানায় বায়ু দূষণ বাড়ছে। যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যে। ঢাকা শহরের মধ্যে বড় বড় সরকারি প্রকল্প চলাকালীন উচ্চ আদালত সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিয়মিত পানি ছিটানোর নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এরপর লোক দেখানো দু’ চার দিন পানি ছিটানোর হলেও পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায়। পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য ঢাকায় দু’ টি সিটি করপোরেশন থাকলেও তারা এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেন না। নিলেও তা সাময়িক। অথচ বায়ু দূষণের কারণে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে। নিত্য-পণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যেখানে জীবন ওষ্ঠাগত, সেখানে চিকিৎসা ব্যায় নির্বাহ করা মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে উঠেছে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনা সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের এদিকে নজর দেওয়া উচিৎ। প্রয়োজন স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর তা যতো তাড়াতাড়ি করা যায় ততোই মঙ্গল।