দেশব্যাপী অপরাধ জগতের ভয়ঙ্কর আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনাখুনিসহ নানা অপরাধে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে। মাদক ব্যবসা ও দখলবাজিতেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। অধিকাংশ কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মদদ দিচ্ছে। আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, প্রেমের বিরোধ, মাদকসহ নানা অপরাধে কিশোররা খুনাখুনিতে জড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় ‘বড় ভাই’রা। এছাড়াও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। অপরাধী হয়ে কেউ জন্মায় না। তবে কেন কিশোর বয়সের ছেলেরা অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে এর কারণ খুঁজে বের করা দরকার। লক্ষ করলে দেখা যায়, অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিশোরদের একটি বিরাট অংশ নিম্নবিত্তের। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ছোট-বড় শহরে দরিদ্র পরিবারের লাখ লাখ কিশোর বড় হয় অযত্ন, অবহেলার মধ্য দিয়ে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকার থেকে তারা হয় বঞ্চিত। প্রতিকূল পরিবেশে অবহেলা, বঞ্চনা এবং নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে একসময় অপরাধ জগতের দিকে পা বাড়ায়। কখনো নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে হয়ে ওঠে বেপরোয়া। নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তের ছাড়াও উচ্চবিত্তের পরিবারের কিশোরদের কখনো ভয়ংকর অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। অর্থের প্রাচুর্যও কখনো অনর্থের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মা-বাবার অসতর্কতার কারণে এসব কিশোররা অসৎ সঙ্গে মেশার সুযোগ করে নিচ্ছে। নেশার ঘোরে ঘটিয়ে চলছে নানা অপরাধ, সমাজবিরোধী কার্যকলাপ। এরা মা-বাবা, নিকটাত্মীয়কে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করছে না। ফলে কিশোর অপরাধ দূরীকরণে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না করলে কিশোর গ্যাং কালচার স্থায়ী ব্যাধি ক্যানসার রূপে ছড়িয়ে পড়বে। কিশোর অপরাধ দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া অত্যান্ত জরুরি। পদক্ষেপ অনুযায়ী নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়িত হলে কিশোর অপরাধ থেকে তরুন প্রজন্মকে বাঁচানো সম্ভব। কিশোর অপরাধীদের পেছনে মদদ দেওয়া গডফাদারদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। কিশোর গ্যাংয়ের আড্ডাস্থলে পুলিশের নিয়মিত টহল দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা কিশোরদের রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ছিন্নমূল কিশোরদের করতে হবে পুনর্বাসন। অপরাধ চক্রে জড়িয়ে যাওয়া কিশোরদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণই সমাজ থেকে কিশোর অপরাধের বিনাশসাধন সম্ভব।