সমাজে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ কর্মগুলোর মধ্যে মানব পাচার অন্যতম অপরাধ কর্ম। বিশ্বের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন মানুষ পাচারের শিকার হচ্ছে, যার মধ্যে বাংলাদেশীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চাকরির প্রলোভন, উন্নত জীবনের স্বপ্ন, সুযোগ-সুবিধা প্রদান, ভালো পরিবেশের নিশ্চয়তা পাচারকারীদের মুখের বুলি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানব পাচারের শিকার মানুষের বেশির ভাগই অত্যন্ত গরিব এবং জীবিকার তাগিদে এ পথে পা দেন। বাংলাদেশ থেকে সাধারণত প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ সৌদি আরবে পাচারের ঘটনা দেখা যায়। মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে অভিবাসীদের গণকবর এবং ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে বাংলাদেশীদের সলিল সমাধি মানব পাচার সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। সম্প্রতি খবর মিলছে, টুযরিস্ট ভিসায় বিদেশের ড্যানস বারে নারী পাচার করা হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংশিস্নষ্ট প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, দেশী ও বিদেশী একটি গোষ্ঠী এ চক্রের সঙ্গে জড়িত। তাদের চিহ্নিত করা হলেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও নারী ও শিশু পাচারের বিষয়টি মূলত রয়ে গেছে অদৃশ্য, অগোচরিত এবং অনালোচনায়। এর পড়েও সরকারের এ ব্যাপারে যতটা নজর দেয়া দরকার ছিল, ততটা নেই। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকার মানব পাচারবিষয়ক অপরাধের তদন্ত, মামলা পরিচালনা, অপরাধীর দ- দেয়া ইত্যাদি বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে মানব পাচার বেড়েই চলেছে। পাচার হওয়া মানুষের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। মানব পাচার নির্মূল করা সম্ভব না হলেও একে সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য আমাদের প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে। মানব পাচার রোধে সরবপ্রথম প্রয়োজন আত্মসচেতনতা। আত্মসচেতনতাই মানব পাচার রম্নখে দিতে পারে। বিদেশে গমনেচ্ছু কর্মীদের আত্মসচেতন হতে হবে। রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া আবশ্যক। অজ্ঞতাকে ছুড়ে ফেলে প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগতভাবে এগিয়ে আসা অত্যন্ত গুরম্নত্বপূর্ণ। নারী ও শিশু পাচারকারী অবৈধ ও অনৈতিক ব্যবসার সঙ্গে একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক দল নিয়োজিত। এ-জাতীয় পাচার বর্তমানে আন্তর্জাতিক ও আন্তঃদেশীয়। তাই এ ধরনের অমানবিক পরিস্থিতিতে যেন কোনো নারী-শিশু আর না পড়ে, তা নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তাবিত ট্রাইবুযনালগুলো ভূমিকা রাখুক। সরবোপরি বলতে চাই, মানব পাচার একটি জঘন্য অপরাধ। এ ঘৃণ্য অপরাধে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতেও উদ্যোগ নিতে হবে। যেহেতু জীবন ও জীবিকার কারণে স্বচ্ছল জীবনযাপনের লক্ষ্যে মানুষ বিদেশগামী হতে চায়, সেহেতু গমনাগমন যাতে নিরাপদ এবং বৈধ হয় সেই বিষয়টি আমলে নিতে হবে। মানব পাচারের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য।