রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোর-ছিনতাইকারী ও পকেটমার সদস্যরা। দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে ছিনতাই হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। কেবল বাসের জানালা দিয়ে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া বা হঠাৎ হামলা নয়, রীতিমতো দলবল নিয়ে যাত্রীদের আক্রমণ করছে ছিনতাইকারীরা। দেখা যাচ্ছে অস্ত্রের ব্যবহারও। তাছাড়া মোটরসাইকেলে করে রিকসাযাত্রীদের টার্গেট করে অলিগলিতে চলছে ছিনতাই। এছাড়াও সড়কের পাশে ওতপেতে থাকা ছিনতাইকারীরা ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। প্রতিদিন যাত্রীরা মোবাইল হারাচ্ছে। অনেক সময় ছুরিকাঘাতের ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। অনেকেই নিজের মোবাইল ফোন সেট ফিরে পেতে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। তবে চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল উদ্ধার করার সংখ্যা খুবই কম। রাজধানীর মোহাম্মপুর, আদাবর, হাজারীবাগ, ধানমন্ডি ও তেজগাঁও থানা এলাকায় সাধারণ মানুষ ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে। নারী-পুরুষ, স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ সবাইকে এর কবলে পড়তে হচ্ছে। এতে পথচারী ও এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ সব ছিনতাইকারীরা বেশির ভাগ ধরা পড়ার পরে জামিনে বের হয়ে বা পলাতক থেকে আবারও ছিনতাইয়ের কাজে যুক্ত হয়। ছিনতাইকারীরা বার বার গ্রেপ্তার হচ্ছেন। কিন্তু তারা সংশোধন হচ্ছেন না। জানা যায়, রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০ মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এসবের মধ্যে কম দামি মোবাইলগুলো সরাসরি বিক্রি করা হয়। আর বেশি দামি বা স্মার্টফোনের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) পরিবর্তনের পর সেগুলো দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যেগুলোর আইএমইআই পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না, সেগুলো ভেঙে পার্ট পার্ট করে বিক্রি করা হয়। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ছিনতাইকারীরা অর্থ, মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মানুষের ওপর আক্রমণও করছে। তাই মোবাইল ফোন সেট ছিনতাই হয়ে গেলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে অপরাধীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার পদক্ষেপ নিতে হবে অবিলম্বে। ছিনতাই বা এ ধরনের অপরাধের মাত্রার তুলনায় অপরাধীদের গ্রেফতার, বিচার ও শাস্তির ঘটনা কম বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা মামলা করেন না। এসব ক্ষেত্রে কেন ভুক্তভোগীদের মামলা করার আগ্রহ কম তা খতিয়ে দেখা দরকার। যেসব অপরাধী প্রযুক্তির অপব্যবহার করে অন্য অপরাধীকে সহায়তা করে-সংশ্লিষ্ট সব অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার পদক্ষেপ নেওয়া না হলে সমাজে নতুনমাত্রায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ছিনতাইয়ের প্রতিটি ঘটনাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে মোবাইল ফোন উদ্ধারসহ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে কর্তৃপক্ষকে যথাযথভাবে তৎপর হতে হবে। তা না হলে সারা দেশে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।