বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময় হলো গ্রীষ্ম, রমজান ও সেচ মৌসুম। এই সময়ে দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা সর্বোচ্চ মাত্রা ছুঁয়ে যায়। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। আগামী মাসে গরম আরও বাড়বে, সে সঙ্গে রমজান ও সেচ মৌসুম শুরু হবে এক সঙ্গে। দেশে গরমের দিন, রোজার মাস এবং সেচ মৌসুমকে কেন্দ্র করে আগামী মাসগুলোতে চাহিদার পূর্বাভাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে না, যার ফলে শীত যাওয়ার আগেই শুরু হয়ে গেছে লোডশেডিং। যার কারণ হিসেবে দেখা গেছে টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা ডলার, দুটির সংকটেই ভুগছে বিদ্যুৎ খাত। ফলে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন হচ্ছেনা বিদ্যুৎ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ডলার, যা বড়জোর তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য যথেষ্ট। যদিও এক প্রতিবেদনে দেখা যায় বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) গ্রীষ্মকালীন ১৭,৮০০ মেগাওয়াট প্রাক্কলিত সর্বোচ্চ চাহিদার বিপরীতে দিনে ১৭,৩০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু ডলার সঙ্কটের কারণে তার কতটুকু সম্ভবপর হবে তার নিশ্চয়তা নেই। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। গত বছরের চেয়ে চাহিদা বেড়েছে ১১ শতাংশের মতো। মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৪৮১ মেগাওয়াট হলেও এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদন ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট হয়েছে গত বছরের ১৯ এপ্রিল৷ এ বছর গরমের সময় সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও কোনোভাবেই লোডশেডিং এড়ানো যাবে না। আবহাওয়া অধিদফতরের এক রিপোর্টে দেখা যায় এবছর দেশের তাপমাত্রা ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। এর বাইরেও দেশে ৩-৫টি মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে সঙ্গে বয়ে যেতে পারে মাঝারি তাপপ্রবাহ। স্বাভাবিক ভাবেই এই সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা থাকবে সর্বোচ্চ। যদিও ঢাকা এবং দেশের অন্যত্র অনেক এলাকা প্রতিদিন ৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুতের ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে ফলে সংঘটিত হচ্ছে লোডশেডিং। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে উৎপাদন সক্ষমতার কোনো ঘাটতি নেই। তবে ঘাটতি আছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও জ্বালানি তেলের (ডিজেল, ফার্নেস) সরবরাহে। চাহিদামতো জ্বালানি না পাওয়ায় গত দুই বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে ব্যাপক লোডশেডিংয়ে ভুগতে হয়েছে ভোক্তাদের। তাই এবারও যাতে একই ভাবে জনগণের ভোগান্তি না হয় তার জন্য সরকারকে নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ। এই রোজায় যেন লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে থাকে এটাই সবার কাম্য।