শব্দদূষণের ক্ষতি সম্পর্কে জানা থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে মানুষ উদাসীন। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় শব্দদূষণের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ হারে শব্দদূষণ চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে রাজধানীর বিপুলসংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে। বর্তমানে উচ্চশব্দের কারণে বিভিন্ন বয়সি মানুষ শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন নগর-মহানগরে, এমনকি কোনো কোনো গ্রামীণ জনপদেও শব্দদূষণ সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। শব্দদূষণের কুফল বিষয়ে জনসচেতনতার অভাব এবং দূষণ প্রতিরোধে যথাযথ প্রশাসনিক নজরদারি ও পদক্ষেপের ঘাটতির কারণেই এমনটি হচ্ছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও এর প্রয়োগ খুবই অপ্রতুল। জানা যায়, ৬০ ডেসিবল মাত্রার শব্দে মানুষের সাময়িক শ্রবণশক্তি নষ্ট এবং ১০০ ডেসিবল মাত্রার শব্দে স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দদূষণের বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে রাজধানীর বিপুলসংখ্যক মানুষ মারাত্মক ক্ষতির শিকার হবে। কাজেই এ বিষয়ে উদাসীন থাকার সুযোগ নেই। রাজধানীতে শব্দদূষণের বহু উৎস রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। যানবাহনের হর্ন, নির্মাণকাজ, সংস্কারের সময় সেবা সংস্থাগুলোর সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি, মাইকের ব্যবহার, শিল্পকারখানা-কোনো ক্ষেত্রেই শব্দদূষণ বিষয়ে যথাযথ নিয়ম মানা হয় না। বস্তুত রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে নামলে কখনো কখনো মনে হয়, যানবাহনের চালকরা হর্ন বাজানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। এক্ষেত্রে চালকের পাশে যারা থাকেন, তাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তীব্র শব্দ মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্রের ওপর নানা মাত্রায় প্রভাব ফেলে। উচ্চমাত্রার শব্দ বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। উচ্চমাত্রার শব্দ আংশিক বা পূর্ণ বধিরতারও কারণ হতে পারে। শব্দদূষণের কারণে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হলেও দূষণরোধে কর্তৃপক্ষের জোরালো তৎপরতা একেবারেই দৃশ্যমান নয়। সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে খুব একটা সচেতন নয়। শব্দদূষণ নিয়ে বছরে দু-একদিন সভা- সেমিনার, কর্মশালা ইত্যাদির আয়োজন করা হলে তেমন সুফল মিলবে না। এসব আয়োজনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে শব্দদূষণের বিষয়ে সচেতন করার পদক্ষেপও নিতে হবে। কর্তৃপক্ষের উচিত শব্দদূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করে দূষণ রোধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া। দেশে বায়ুদূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এছাড়া পানি ও মাটি দূষণের বিষয়টিও বহুল আলোচিত। যেহেতু দেশে পরিবেশদূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, সেহেতু সব ধরনের দূষণ রোধে জোরালো অভিযান চালানো জরুরি হয়ে পড়েছে।