গাজীপুরের কাপাসিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণের দাবী পুরণ করে নির্মাণের ৯ বছর পর উদ্বোধন করা হয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমেপ্লেক্স ভবন। শনিবার প্রধান অতিথি হিসাবে ভবনের দ্বার উম্মোচন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি এমপি। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের জন্মভূমি কাপাসিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল উপজেলা সদরে তাদের একটি ঠিকানা। সেই দাবী পুরণের লক্ষে উপজেলা সদরের মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে আড়াই কোটি টাকা ব্যায়ে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় নির্মিত কমপ্লেক্সটি নয় বছর বন্ধ ছিল। এরপর উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধনের পর মুক্তিযোদ্ধাগণের প্রত্যাশা, তাঁরা যেন এর সুফল ভোগ করতে পারেন। উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ কে এম লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে সাবেক মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডার বজলুর রশিদ মোল্লার পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. মোঃ আমানত হোসেন খান প্রমুখ। উদ্বোধন শেষে আলোচনা সভায় বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বলেন, এই সরকারের এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এরকম কমপ্লেক্স নির্মাণ। এটা জাতীয় সম্পদ। এর রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব আমাদের সবার। ভবনটি নতুন করে আবারো রং সহ আনুষঙ্গিক কাজ করে দেয়া হয়েছে। এটি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্তমানে এর সভাপতি। এসময় তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ভবনটির বরাদ্দ দেয়া হবে। কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হবে এখানে, তেমনি এর আয় দিয়ে এর রক্ষণাবেক্ষণ এবং অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সাহায্য করা যাবে। উদ্বোধনের পর একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেন, দেরিতে হলেও ভবনটি উদ্বোধন হওয়াতে আমরা অনেক খুশি। আশাকরি মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো এখানে সুন্দরভাবে পালিত হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, অবশেষে ভবনটি উদ্বোধন হচ্ছে এটি আনন্দের। তবে, রাজনৈতিক কিছু চাপ রয়েছে। যে কারণে ভবনটি সঠিকভাবে যেন বরাদ্দ দেয়া হয়। এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। যেন এ থেকে কেউ ফায়দা লুটতে না পারে। কাপাসিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এমএ গনি বলেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করার পর থেকে আমাদের সকলেরই দাবি ছিল ভবনটি উদ্বোধনের। আজ আমাদের অত্যন্ত আনন্দের দিন কমপ্লেক্সটি উদ্বোধন হয়েছে। আশা করছি, এর যথাযথ ব্যবহার হবে। এই কমপ্লেক্সটির সুফল যেন সবাই ভোগ করতে পারে। জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি, কাপাসিয়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বাস্তবায়ন করেছে। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের কমপ্লেক্সটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালের ৬ মে কমপ্লেক্সটি নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন গাজীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি। চুক্তি মূল্য ২ কোটি ৫৯ লাখ ৪৯ হাজার ৯ শত ২৮ টাকা। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারী নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি শেষ হয়। ভবনটি ২ হাজার ২০৬ বর্গফুট আয়তনের তিনতলা বিশিষ্ট। প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় রয়েছে দোকান। প্রতি তলাতে রয়েছে পাঁচটি করে রুম (দোকান ঘর)। তৃতীয় তলায় রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কনফারেন্স ও অফিস রুম। বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠান পালনের জন্য ছাদে রয়েছে মুক্ত মঞ্চ। নির্মাণের পর দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় ভবনটি পরিষ্কার, প্রয়োজনীয় মেরামত, রং করাসহ আনুষঙ্গিক মিলিয়ে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার মত ব্যয়ে নতুন করে ভবনটি সংস্কার করা হয়েছে।