সড়ক পরিবহন খাতে সারা দেশে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলে। প্রকাশ্যেই চলে এই চাঁদাবাজি। বাস, ট্রাক, টেম্পো, সিএনজি ও অটোরিকশার স্ট্যান্ডগুলোতে হচ্ছে এই চাঁদাবাজি। প্রতিদিন সড়কে চলছে চাঁদাবাজি। জিম্মি হয়ে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। চাঁদা না দিলে গাড়ি থামিয়ে রাখা হয়। মাঝ রাস্তায় যাত্রীদের নিয়ে বিড়ম্বনা এড়াতে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা লাইনম্যানদের হাতে নির্ধারিত চাঁদার টাকা তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন শ্রমিকরা। আর পরিবহন খাতে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। রাজনৈতিক দলের উঠতি নেতা থেকে পাতি নেতাও রয়েছে চাঁদাবাজির এই শক্তিশালী সিন্ডিকেটে। এক কথায় সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে পরিবহন খাত। প্রকাশ্যে এ সব চাঁদাবাজি চললেও প্রশাসন অনেকটা নির্বিকার। নেয়া হচ্ছে না কোন কার্যকরী পদক্ষেপ। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায় বাসের নিবন্ধনসহ নানা সেবা পেতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএকে বছরে ৯০০ কোটি টাকার বেশি ঘুষ দিতে হয়। এর বাইরে ঘুষ দিতে হয় দলীয় পরিচয়ধারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী; ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ; মালিক-শ্রমিক সংগঠন এবং পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধিদের। অন্য এক প্রতিবেদনে দেখা যায় দেশের সড়ক পরিবহন সেক্টরে মালিক ও শ্রমিকদের মোট ৯৩২টি সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে ৬৮৬টি সংগঠনই অবৈধ। আর এসব অবৈধ সংগঠন গুলোই পরিবহণ খাতে চাঁদাবাজির মূল কারণ। পরিবহণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবৈধ চাঁদাবাজির সঙ্গে কেবল বিশেষ কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত নয়; অথবা বিষয়টি কোনো একটি জেলা বা অঞ্চলের মধ্যেও সীমাবদ্ধ নয়-চাঁদাবাজির শেকড় দেশজুড়ে বিস্তৃত। আবার এই সড়কের চাঁদাবাজিই মূলত পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়। আবার দেখা যায় সড়কপথে বিভিন্ন সংগঠন, পুলিশ ও ব্যক্তির নামে পরিবহণ থেকে চাঁদাবাজি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকলে তা জানাতে চালু হয়েছে হটলাইন, তবে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদা আদায় বহাল থাকছে। মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নামে প্রতি ট্রিপে ৩০ টাকা করে মোট ৬০ টাকা আদায় করা যাবে। প্রতিটি জেলায় নির্দিষ্ট স্থানে এ চাঁদা আদায় করবেন দুই সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এই চাঁদাবাজির কারণে সমস্যায় পড়ছে সাধারণ জনগণ। চাঁদার টাকার জোগান দিতে পরিবহন মালিকরা যাত্রীদের থেকে আদায় করছে অতিরিক্ত ভাড়া। এমতাবস্থায় চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হলে শাসনব্যবস্থা ও আইনের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যা মোটেই কাম্য নয়। দেশের অর্থনীতি গতিশীল রাখার জন্য সুশৃঙ্খল সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা অতীব জরুরি। তাই পরিবহণ খাতসহ সব ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি নির্মূলে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।