নীলফামারীর সৈয়দপুরে দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে কারখানা। আর এ সুবাদে রেলের অগাধ সম্পত্তির ওপর লাগানো হয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা। ওই গাছগুলো এক দিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা করেছে অপরপাশে শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। বর্তমানে ওই গাছগুলোর বয়স চলছে প্রায় দেড়শ বছরের কাছাকাছি। সৈয়দপুর শহরের একটি অসৎ চক্র ওই গাছগুলোর পিছনে লেগেছে। কতিপয় ব্যবসায়ি গাছগুলোর গোড়া তাদের দোকানের মধ্যে ঘিরে নিয়েছে। রাতের কোন এক সময়ে প্রথমে কাটা হয় গাছের ডালপালা। এরপর গোড়ায় দেয়া হয় বিষাক্ত মেডিসিন। এগুলো প্রয়োগের ফলে অল্প সময়ের মধ্যে গাছগুলো মরে যায়। তখন প্রচার করা হয় মরা গাছগুলো কেন কাটা হয় না। আর এ সকল গাছ মারার পিছনে রয়েছে রেলের কর্মকর্তা জড়িত। কারণ যে সকল স্থানে গাছগুলো রয়েছে ওই গাছ তুলে নেয়ার পর সে স্থানটুকু বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকায়। আর এ বেচা বিক্রির সাথেও জড়িত রেলের লোক। মুলত ওই অসৎ কর্মকর্তাদের আবার টাকা দিয়ে গাছ কাটার ব্যবস্থা করা হয়। শহরের সচেতন মহল বলছেন গাছগুলো মরার পিছনে যারা জড়িত তদন্ত হলে রহস্য বের হয়ে আসবে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, ৮শ একর রেলের সম্পত্তি এ শহরে। এ সম্পত্তি গুলোর মধ্যে রয়েছে মুল কারখানা, সাহেবদের বসবাসের জন্য বিশাল বিশাল বাংলো, যারা ছোট খালাসি পদে কাজ করেন তাদের জন্য বলা চলে কুড়ে ঘর, শ্রমিক ও অফিসারদের জন্য আলাদা আলাদা বিনোদন কেন্দ্রে বা মিলনায়তন। এছাড়াও রয়েছে ইটভাটা, খ্রিস্টান ধর্মীয়দের দুইটি গীর্জা। রেস্ট হাউস, শ্রমিকদের দলীয় কার্যালয়। অপরপাশে সৈয়দপুর হল রেলওয়ে জেলা। এখানে রেলের একজন সিনিয়র পুলিশ সুপারের কার্যালয় রয়েছে। এছাড়াও আছে রেলওয়ে বেতার কেন্দ্র। কৃষি জমি, জলাশয়, হাসপাতাল। তাছাড়া ওই সময় ১২৫ একর জমি লিজ স্বরুপ দেয়া হয় পৌরসভাকে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ শপের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারি শহীদুল ইসলাম জানান, অগোছালো ভাবে রেলের সম্পত্তি ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন স্থানে। ওই সকল জমিতে লাগানো হয় রেইনট্রি, কড়াই, সিরিস, কৃষ্ণচূড়া, ইউক্যালিপটাস, শাল, অর্জুন, দেবদারুসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। তিনি বলেন ১৮৭০ সালে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় লোককে ধরে ধরে এনে চাকুরী দেয়া হত। কেউ আবার চাকুরী না করে পালিয়ে যেত। সে সময় কর্মকর্তা ও কর্মচারির পদভারে মুখরিত ছিল কারখানা চত্বর। আজ কারখানা যেন শ্বশানে পরিনত হয়েছে। তিনি আরও জানান, শপ আছে কাজ নেই, কাছ আছে শপ নেই। নতুন লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা কোন কাজ জানে না। অনেককে বলা চলে বসে বসে বেতন দেয়া হয়। রেলওয়ে স্টেট বিভাগের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম জানান, অনেক গাছ আধামরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবার কোন কোন গাছের ডালপালা কে যেন কেটে নিয়েছে। তবে গাছগুলো পুরোপুরি এখনো মৃত না। ওই গাছগুলো বিপদজনক এটা ঠিক কিন্তু গাছ কাটার নিয়ম অনুযায়ী তা করতে হবে। এ পর্যন্ত ১৬টি ঝুঁকিপূর্ণ গাছ চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বনবিভাগের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হলে তা তদন্ত শেষে কেটে ফেলার অনুমতি দেয়া হয়। সৈয়দপুর সামাজিক বনায়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহিকুন ইসলাম মুশকরি বলেন, রেলের প্রতিবেদন তদন্ত করে ১৬টি গাছ কেটে ফেলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক সাদেকুর রহমান বলেন, বনবিভাগ থেকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। অতি দ্রুত সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো কাটা হবে। তবে ওই গাছ কাটার পর আমরা বহু প্রজাতির গাছ রোপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।