বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) পরিচালনা বোর্ড-এর ৮৩ তম সভা চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহান বলেছেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্ভিক, তেজস্বী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এবং সফল রাষ্ট্রনায়কোচিত সিদ্ধান্ত ও পরিচালনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। চলমান যাত্রায় বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে। আর এই ডিজিটাল বাংলাদেশের নির্মাতা ও উন্নয়নের কান্ডারীর নাম শেখ হাসিনা। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে- পদ্মা সেতু, কর্ণফুলি টানেল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট অন্যতম। এছাড়াও কৃষির উন্নয়নেও সারাবিশ্বে তিনি একটা রোল মডেল সৃষ্টি করেছেন। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের জন্য তিনি যেমন ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ ঘোষণা করেছেন। তেমন উন্নত দেশের কাতারে সামিল হওয়ার অভিপ্রায়ে ভিষণ ২০৪১ কে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন।’ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক ‘এক ইঞ্চি জমি অনাবাদি রাখা যাবে না’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সোমবার (০৬ মে) বেলা ১১টায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্বকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সভার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-কে দেশরতœ জননেত্রী বাঙালী জাতির মুক্তির কান্ডারি, মাদার অব হিউম্যানিটি ও গণতন্ত্রের মানবকন্যা উল্লেখ করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বেগম আখতার জাহান। এরপর বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মহানায়ক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান না থাকলে আজ আমরা স্বাধীন দেশ পেতাম না। তিনি তাঁর জীবনের প্রজ্জ্বলিত আলো দিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে আলো জ¦ালিয়েছেন। আমরা পেয়েছি একটি লাল সবুজের পতাকা, পেয়েছি মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তিনি সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর সোনার বাঙলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন। সে সময়ই যুদ্ধপীড়িত বাঙালি জাতির খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি কৃষি এবং কৃষকের উন্নয়নের উপর বেশী গুরুত্ব দিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি যেমন ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষকের জমির খাজনা মওকুফ করেছিলেন, তেমনি কৃষি খাতে ভর্তুকি এবং গরিব কৃষকদের জন্য সুদমুক্ত ঋণের ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখিয়েছেন। তাই বঙ্গবন্ধুর এই আত্মত্যাগ আমরা কোনভাবেই ভুলতে পারিনা।
এসময় উপস্থিত বোর্ডের সদস্যদের উদেশ্যে বিএমডিএ চেয়ারম্যান বলেন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অত্র অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সেচ সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি বহুবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিএমডিএ আজ অত্র এলাকার ব্যপক উন্নয়নের অংশিদার, দেশের কৃষিতে সফলতার অন্যতম ভাগিদার, সর্বপরি এটি একটি স্বঅর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। আমাদের মূল গর্বের জায়গা এটি। আমরা যেমন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক বিদ্যুতের উপর চাপ কমাতে সোলার পাওয়ার নিয়ে কাজ করছি, তেমনি পানির অপচয় কমিয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমাতে শতভাগ ভূ-গর্ভস্থ পাইপ লাইনের মাধ্যমে সেচ প্রদান বিষয়ে কাজ করছি। আমরা পদ্মা, মহানন্দা নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে উঁচু বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সরবরাহ করে ভূ-পরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধিতে সচেষ্ট রয়েছি। আমরা পরিবেশ নির্মল রাখতে যেমন বৃক্ষ রোপণ করি, তেমনি উৎপাদন বাড়াতে মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ করে থাকি। আর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কৃষিখাতের অন্যতম একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বর্তমানে ১৬০০০ এর অধিক সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে প্রায় ১০.৯ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করছে। ফলে প্রতি বছর প্রায় ৫৬.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদিত হচ্ছে, যা বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের চাহিদা পুরন করার পাশাপাশি সারা দেশের খাদ্যের যোগান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এক সময়ের ঠাঁঠী, মরুময় বরেন্দ্র অঞ্চল বিএমডিএ'র কল্যাণে আজ সুজলা-সফলা, শস্য-শ্যামলায় পরিণত হয়েছে। সেচের পানির সংস্থান হওয়ায় মরুপ্রবণ উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ অনাবাদী জমিসমূহ আবাদের আওতায় এসেছে। ফলে পূর্বের এক-ফসলী ও দো-ফসলী জমি অঞ্চল ভেদে চার ফসলী জমিতে পরিণত হওয়ায় উৎপাদন ব্যপক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চল আজ বাংলাদেশের শস্য ভান্ডার হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাধারণ অধিশাখা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) মো. সাজজাদুল হাসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন, মৎস্য-১ অধিশাখার যুগ্মসচিব মো. হেমায়েত হোসেন, কৃষি মন্ত্রনালয়ের উপকরণ অধিশাখার যুগ্মসচিব শাহানারা ইয়াসমিন লিলি, বিএমডিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. শামসুল হোদা, বিএমডিএ’র উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওহিদুর রহমান, বিএমডি’র বোর্ড সদস্য (চাঁপাইনব্বগঞ্জ) মোসা সাকিনা খাতুন (পারুল), বোর্ড সদস্য (রাজশাহী) সাংবাদিক কাজী শাহেদ উল হক, বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুর রশীদ ও বোর্ড সদস্য সচিব রাজশাহী জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পক্ষে প্রতিনিধি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাবিক) মো. কল্যাণ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক (ডিসি) দিনাজপুর-এর পক্ষে প্রতিনিধি দিনাজপুর স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক সালাহ্উদ্দিন আহমেদ এবং রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) এর পক্ষে প্রতিনিধি মো মিজানুর রহমান সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণ।