পানি ও পয়ঃনিস্কাশন খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরিকল্পনা, বাজেট মনিটরিং এবং গণশুনানীতে নাগরিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং যথাযথ সমন্বয় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৬ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে, নিরাপদ ও স্বল্পমূল্যের খাবার পানিতে সকলের সার্বজনীন ও সমতাভিত্তিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন খাতে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুপেয় পানি ব্যবস্থাপনাকে একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক করতে হবে, যা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রার অগ্রগতির পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে সহায়তা করবে এবং কাংখিত ফলাফলকে প্রতিফলিত করবে। এই লক্ষ্য অর্জনে ওয়েভ ফাউন্ডেশন জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ‘পানি, পয়ঃনিষ্কাশন এবং স্বাস্থ্যবিধি এর ঝুঁকি মোকাবেলায় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন খাতে জবাবদিহিতা বৃদ্ধির জন্য সহায়তা’ শীর্ষক প্রকল্পটি রাজশাহী ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনে বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের একটি অন্যতম কাজ হিসাবে খুলনা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ‘পানি ও পয়ঃনিস্কাশন খাতে শুদ্ধাচার ও সুশাসন বাস্তবায়নের অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, সুযোগ ও করণীয়’ শীর্ষক একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
এদিকে, বুধবার (১৫ মে) দুপুরে খুলনা ওয়াসার সভা কক্ষে উক্ত গবেষণাপ্রাপ্ত তথ্য, বিশ্লেষণ এবং সুপারিশসমূহের আলোকে ‘খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সুপেয় পানি ও পয়ঃনিস্কাশন খাতের বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, সুযোগ ও করণীয়’ শীর্ষক এক অ্যাডভোকেসি সভার আয়োজন করা হয়। অ্যাডভাকেসি সভায় উপস্থিত ছিলেন মোঃ আবদুল্লাহ, পি ইঞ্জ. ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খুলনা ওয়াসা, সানজিদা বেগম, সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) খুলনা সিটি কর্পোরেশন। সভার শুরুতে আয়োজকের পক্ষে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের পরিচিতি এবং ওয়াস প্রকল্প সম্পর্কে উপস্থাপনা করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপণ্ডপরিচালক কানিজ ফাতেমা। সভায় গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনাসহ সভাটি সঞ্চালনা করেন লিপি আমেনা, প্রকল্প সমন্বয়কারী, উইন ওয়াস প্রকল্প, ওয়েভ ফাউন্ডেশন। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক সহকারি প্রকৌশলী, খুলনা ওয়াসা, মোঃ আব্দুর রাকিব, সহকারি পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা, খুলনা সিটি কর্পোরেশন, মোঃ লুৎফর রহমান, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক, এনজিও ফোরাম খুলনা। নুরুজ্জামান, সিনিয়র সাংবাদিক, স্থানীয় লোকমোর্চার সদস্য এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।
আলোচনা সভায় খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবদুল্লাহ, পিইঞ্জ. বলেন, ওয়েভ ফাউন্ডেশন পরিচালিত গবেষণার সুপারিশের আলোকে ওয়াসা সমস্যা সমূহের সমাধান বের করবে। খুলনা ওয়াসা শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে কাজ করছে এবং এ লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাচ্ছে। ২০০৯ সালে যেখানে ওয়াসার বিলিং সিস্টেম ছিল এনালগ ভিত্তিক। কিন্তু এখন ওয়েব সাইটের মাধ্যমে একজন গ্রাহক তার বিল সম্পর্কে জানতে পারছেন এবং ব্যাংক এর মাধ্যমে পানির বিল প্রদান করছে। গ্রাহকসেবা নিশ্চিতে খুলনা ওয়াসা নিয়মিত গণশুনানীর আয়োজন করে। তিনি আরও বলেন, ওয়াসার সেবার মূল্য তালিকা সকল ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের লিখিত আকারে প্রেরণ করা হবে যাতে করে গ্রাহকরা ওয়াসার সেবা সম্পর্কে জানতে পারেন।
সিটি কর্পোরেশনের সচিব সানজিদা বেগম বলেন, গবেষণার সুপারিশের আলোকে সকলকে পানি ও পয়ঃনিস্কাশন খাতের সমস্যা সমাধানে একসাথে কাজ করতে হবে। জনগণ ওয়াসার সেবাসমূহ সম্পর্কে জানলে তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
এসডিজি লক্ষ্য ৬ অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষের কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছে দিতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ দূরীকরণে প্রত্যেক মানুষের কাছে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন পৌঁছাতে সরকার অনেক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে। তা সত্বেও এখনও পানি পরিষেবা ও ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অনেক ঘাটতি রয়েছে। তাই সকলের জন্য মানসম্মত সুপেয় পানি নিশ্চিতকরণে পানি ও পয়ঃনিস্কাশন খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বিভিন্ন সামাজিক জবাবদিহিতার পদ্ধতি অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা, বাজেট মনিটরিং এবং গণশুনানী সম্পর্কে নাগরিকদের জানানো এবং অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যথাযথ সমন্বয় দরকার বলে এই অ্যাডভোকেসি সভায় অংশগ্রহণকারীরা মতামত তুলে ধরেন।
ওয়েভ ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায় সুপেয় পানি এবং পয়ঃনিস্কাশন খাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে তথা সুশাসন ব্যবস্থাপনার জন্য বেশ কিছু সুপারিশ প্রদান করে। যার মধ্যে সুপেয় পানি ও পয়ঃনিস্কাশন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা; সেবার মূল্য তালিকা সকল ওয়ার্ডে প্রেরণ করা; নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করতে ব্যাপকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা; প্রয়োজনে সিটিজেন চার্টার হালনাগাদ, সচেতনতামূলক তথ্য সম্বলিত বিলবোর্ড স্থাপন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা; পানি ও পয়ঃনিস্কাশন খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বিভিন্ন সামাজিক জবাবদিহিতার পদ্ধতি অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা, বাজেট মনিটরিং এবং গণশুনানীতে নাগরিকদের জানানো এবং অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা; ব্যবহারযোগ্য সহজে অভিযোগ দায়ের এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের রিড্রেস ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে হবে। সাধারণ মানুষের জন্য অনলাইনে অভিযোগ করার পাশাপাশি বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযোগ বক্স স্থাপন করা; জরুরী পরিস্থিতিতে যেমন: প্রচন্ড তাপদাহে ও দুর্যোাগকালীন সময়ে পানি ও পয়ঃনিস্কাশন কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা ইত্যাদি।