খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে বাণিজ্যিকভাবে বাদাম চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে জমি থেকে বাদাম গাছের গোড়ায় বাদাম আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে আর সঠিকভাবে পরিচর্যা করায় এবার বাদামের ফলন ভালো হবে এমটাই আশা করছেন বাদাম চাষের সাথে জড়িত কৃষকেরা। খুলনা এলাকায় প্রচন্ড তাপদাহে বাদামগাছ দিনের বেলা ঢলে পড়লেও বৃষ্টি হওয়ার পর বাদামের গাছগুলো আবার সতেজ হয়েছে।
বাদামের চাহিদা ও বেশী দামে বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকেরা উৎসাহ সহকারে বাদামচাষে ঝুকে পড়েছে গাজীরহাট এলাকার কৃষকেরা। তবে অনেক বাদাম ক্ষেতে পানির অভাবে বাদাম গাছ প্রচন্ড তাপদাহে গাছ ঢলে পড়ছে। যা উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। যেহেতু এখনও খুলনা এলাকায় উচ্চ তাপমাত্রা বিদ্যমান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার গাজীরহাট ইউপির বেশ কয়েকটি গ্রামে কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে বাদম চাষ করে আসছেন। স্থানীয় বাজারে বাদামের চাহিদাও রয়েছে বেশ ভালো। কারণ খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর এলাকায় রয়েছে বাংলাদেশের ভাজা উৎপাদন কারখানা। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এই ফসল চাষের প্রতি উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের দিন-দিন আগ্রহ বাড়ছে। এখানকার উৎপাদিত বাদাম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে বাদাম কিনে নিয়ে যান। চলতি মৌসুমে দিঘলিয়া উপজেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছে এ এলাকার প্রায় ২ শতাধিক কৃষক। ফলন বৃদ্ধিতে কৃষকদেরকে সব ধরণের সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। এ বছর সবচেয়ে বেশি বাদামের চাষ হয়েছে। একাধিক কৃষক জানান, এখানকার বেশিরভাগ এলাকা উঁচু হওয়ায় জমিতে স্বল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এখন চাষিরা বাদাম চাষে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বাদাম আবাদ করতে প্রতি ১ বিঘা জমিতে প্রায় ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। তাতে বিঘা প্রতি ফলন পাওয়া যাচ্ছে ৪ থেকে ৫ মণ বাদাম। যা স্থানীয় বাজারে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৮ হাজার টাকা।
কৃষক মোঃ আইউব আলী মোল্লা জানান, এই গ্রামে প্রায় ১০/১২ বছর ধরে উচ্চ ফলনশীল ও দেশীয় জাতের বাদাম চাষ করছেন কৃষকেরা। এই মৌসুমে ১ একর ৫ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের বাদাম আবাদ করি। তবে বাদাম চাষে কোনো কীটনাশক দেয়া হয় না। আর কিছু দিনের মধ্যেই বাদাম তোলার কাজ শুরু হবে। এক বিঘা জমিতে ফলন হবে প্রায় ৫ মণ। তিনি আরও জানান, বাদাম বিক্রি নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না।
গোপালগঞ্জ, নড়াইল, বাগেরহাট, যশোর ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসে বাদাম ক্রয় করে নিয়ে যায়। বাদাম চাষি মোঃ শাহাবুদ্দীন মোল্লা, ওবায়দুর রহমান, সাদিক মোল্লা, টিপু ফকিরসহ অনেক কৃষক বলেন, এই বছর প্রায় ৪৫ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ করা হয়েছে আমাদের এই এলাকায়। বাদাম গাছের গোড়ায় শিকড়ে কেবল বাদাম আসতে শুরু করেছে। আগামী মাসের দিকে বাদাম তুলে বাড়ি আনা শুরু হবে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বাদামের ফলন ভালো হবে।
গাজীরহাট ইউনিয়নের ব্লক প্রধান উপ সহকারী কৃষি অফিসার অসিত বিশ্বাস, লিপিকা মল্লিক ও স্বর্ণা চৌধুরী এ প্রতিবেদককে জানান, এ বছর এ এলাকার ৫০ জন কৃষকের প্রত্যেককে বিনামূল্যে ১৪ কেজি করে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের বাদাম বীজ দেয়া হয়েছে। প্রদর্শনী চলাকালীনও অনেককে বীজ দেয়া হয়েছে। এলাকার ২ শতাধিক কৃষক বাদাম চাষে সফল কৃষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাদাম চাষের পাশাপাশি কেউ কেউ ভুট্টা চাষেও সফল হয়েছেন। তবে ভুট্টা চাষ দিঘলিয়ায় এখন পর্যন্ত বিস্তার ঘটেনি।
এই ব্যাপারে খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কিশোর আহমেদ বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে বাদাম চাষে স্থানীয় কৃষকদেরকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে। বাদাম চাষে এ এলাকার কৃষকেরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।