দেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেপাটাইটিস সংক্রমণ দিনে দিনে মহামারির মতো প্রকট হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, উচ্চঝুঁকিতে থাকা ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে ভুগছে। এর মধ্যে প্রায় এক কোটি মানুষের সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি আছে। হেপাটাইটিসে বছরে ২২ হাজার রোগী মারা যায়। হেপাটাইটিস হলো ভাইরাসজনিত লিভারের রোগ। চিকিৎসাবিজ্ঞানে পাঁচ ধরনের হেপাটাইটিস রয়েছে। হেপাটাইটিস এ এবং ই স্বল্পমেয়াদি লিভার রোগ। এটি বিশ্রাম নিলে একপর্যায়ে সেরে ওঠে। তবে প্রাণঘাতী হচ্ছে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের সংক্রমণ। হেপাটাইটিসের যে পাঁচ রকম ভাইরাস আছে, তার সবগুলোর সংক্রমণই বাংলাদেশে আছে। ‘ই’ ভাইরাসেই সবচেয়ে বেশি মানুষ ভোগে। এটা ছড়ায় বেশি। ই ভাইরাস মূলত পানির মাধ্যমে ছড়ায়। হেপাটাইটিস এ এবং ই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে আক্রান্তদের ৩ শতাংশের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। আর হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস ছড়ায় মূলত রক্ত এবং মানবদেহের তরল পদার্থের মাধ্যমে। ২০২১ সালে প্রকাশিত একটি তথ্য বলছে, প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ মানুষের শরীরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংক্রমণ আছে আর হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে সংক্রমিত আরো প্রায় ১ শতাংশের কাছাকাছি। এখানেই শেষ নয়, এ দেশের আরো প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ তাদের জীবদ্দশায় কোনো একসময় হেপাটাইটিস ভাইরাসে এক্সপোজড হয়েছে। আর এসব মানুষের অনেকেই কোনো একসময় লিভার সিরোসিস বা এমনকি লিভার ক্যান্সারেও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। এমন তথ্য আছে যে এ দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর মেডিসিন বিভাগগুলোতে প্রতিবছর যত রোগী ভর্তি হয় তার প্রায় ১২ শতাংশ ভুগছে লিভার রোগে। জনসচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। এখন মৃত্যুর এই মিছিল কমিয়ে আনতে হলে সবার আগে মানুষকে সচেতন করতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জেনে নিতে হবে কারো হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাস ইনফেকশন আছে কি না। শুধু সচেতনতা সৃষ্টিই যথেষ্ট নয়, যাঁরা সচেতন হয়ে এগিয়ে আসবেন, তাঁদের জন্য সহজে আর সুলভে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এদের মধ্যে যাঁরা নেগেটিভ রিপোর্ট পাবেন তাঁদের জন্যও চাই সুলভে হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন এবং পজিটিভ হলে লাগবে সস্তায় ওষুধ আর সহজে লিভার বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে বিশেষায়িত চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ।