ইউএনওর কক্ষে ঢুকে জামায়াত নেতাদের বেধড়ক মারলেন বিএনপি নেতারা

এফএনএস (সুজানগর, পাবনা) | প্রকাশ: ৪ মার্চ, ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম
ইউএনওর কক্ষে ঢুকে জামায়াত নেতাদের বেধড়ক মারলেন বিএনপি নেতারা

পাবনার সুজানগর উপজেলায় বিএনপি নেতাদের হামলায় জামায়াতে ইসলামীর চার নেতা গুরুতর আহত হয়েছেন। ইউএনওর কার্যালয়ে ঘটনাটি ঘটে এবং পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। স্থানীয়ভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় জামায়াত নেতারা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। 

সোমবার (৩ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর রাশেদুজ্জামানের কার্যালয়ে এ হামলা চালানো হয়। আহত জামায়াত নেতারা হলেন—উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ফারুক-ই আজম, সেক্রেটারি টুটুল বিশ্বাস, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ওয়ালিউল্লাহ বিশ্বাস এবং সাবেক কাউন্সিলর মোস্তাক আহমেদ। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, জামায়াত নেতারা ইউএনওর কার্যালয়ে একটি কাজে গিয়েছিলেন। ইউএনও অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় তারা অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় উপজেলা বিএনপির সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মজিবর রহমানের নেতৃত্বে একদল বিএনপি নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত হন। তারা ইউএনওর কাছে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের কারণ জানতে চান। সেখানে আগে থেকেই বসে থাকা জামায়াত নেতাদের দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে বিএনপি নেতারা তাদের ওপর হামলা চালান। 

বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান, বাবু খাঁ, মানিক খাঁ, আব্দুল বাছেদ ও আরিফ শেখসহ ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী ইউএনওর কক্ষে ঢুকে জামায়াত নেতাদের কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে গুরুতর আহত করেন। পরে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

ঘটনায় উপজেলাজুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জামায়াতের উপজেলা আমির অধ্যাপক কে এম হেসাব উদ্দিনসহ কয়েকশ নেতাকর্মী ইউএনওর কার্যালয়ে ছুটে গিয়ে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে ইউএনওর সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয় এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

সুজানগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আজম বিশ্বাস, সদস্যসচিব শেখ আব্দুর রউফ ও যুবদলের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। তারা বলেন, “যারা আজকের ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তারা আমাদের দলের হতে পারে না। অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

জামায়াত নেতা অধ্যাপক কে এম হেসাব উদ্দিন অভিযোগ করেন, “বিএনপি নেতারা ইউএনওকে মারধর করতে গিয়েছিল। জামায়াত নেতারা বাধা দিলে তারা আমাদের নেতাদের ওপর হামলা চালায়। ইউএনওকেও মারধর করতে গেলে স্থানীয়রা বাধা দেয়। তারা অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে এবং ভবিষ্যতে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।” তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকে এই নেতারা সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির গডফাদারে পরিণত হয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলন, মাদক কারবার, চুরি-ডাকাতি, অপহরণসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।”

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ইউএনও মীর রাশেদুজ্জামান বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমার কার্যালয়ে মারধরের ঘটনা ঘটেছে এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আহতরা এখনও মামলা করতে আসেননি। তারা এলে মামলা নেওয়া হবে এবং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মজিবুর রহমান খান ও মানিক খানের বক্তব্য জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সফল হওয়া যায়নি। 

স্থানীয়রা জানান, সুজানগর উপজেলায় কিছুদিন ধরে অবৈধ বালু উত্তোলন, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। ইউএনওকে আগেও কয়েকবার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন। 

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে