মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত

নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না শেখ হাসিনা ও কামাল, প্রজ্ঞাপন জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৩৪ এএম
নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না শেখ হাসিনা ও কামাল, প্রজ্ঞাপন জারি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনে সংশোধনের মাধ্যমে। সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কারও বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে তিনি জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হতে বা নির্বাচিত থাকতে পারবেন না। এই বিধান অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

গত সোমবার (৬ অক্টোবর) আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, অভিযোগ দাখিলের পর অভিযুক্ত ব্যক্তি শুধু সংসদ সদস্যত্ব নয়, প্রজাতন্ত্রের কোনো চাকরি, সরকারি পদ বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, মেয়র, কমিশনার কিংবা প্রশাসক পদেও থাকতে বা নিয়োগ পেতে পারবেন না। তবে ট্রাইব্যুনাল থেকে কেউ যদি অব্যাহতি বা খালাস পান, তাহলে তার ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর অভিযোগ গঠন সম্পন্ন হয়েছে এবং সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে তাদের প্রার্থিতা এখন আইনি দিক থেকে বাতিল হয়ে গেছে।

তবে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে আইনি মহলে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন মন্তব্য করেছেন, কেবল অভিযোগ দাখিলের ভিত্তিতেই কাউকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা যথাযথ নাও হতে পারে। তিনি বলেন, “ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ ধারায় বলা আছে— অভিযোগ আমলে নেওয়ার পরই কগনিজেন্স হয়, অর্থাৎ তখনই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আসামি হন। তবেই নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা যুক্তিযুক্ত হবে। তবে অভিযুক্ত হলেই অযোগ্য করার বিধান রাখলে সেটিও ন্যায়সংগত হতে পারে।”

উল্লেখযোগ্যভাবে, বর্তমান আইন সংশোধনের আগে শুধুমাত্র দণ্ডিত ব্যক্তিরাই নির্বাচনে অযোগ্য ছিলেন। ২০১৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সংসদে উত্থাপিত ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধন) বিল’-এ বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু এবার নতুন সংশোধনে “অভিযোগ দাখিল” পর্যায় থেকেই অযোগ্যতা শুরু হলো।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে গঠিত আইন সংস্কার কমিশনও ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তাদের প্রস্তাবে এই পরিবর্তনের পক্ষে সুপারিশ করেছিল। কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল, আদালতে ফেরারি বা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নির্বাচনে প্রার্থী হতে না দেওয়া এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকলে বিশেষ আইনে অযোগ্য ঘোষণা করার বিধান যুক্ত করা উচিত।

নতুন আইনি সংশোধনের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা শেখ হাসিনা ও কামাল— দুজনই এখন নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বাইরে চলে গেলেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে