ইতিহাস গড়লেন রাষ্ট্রদূত খন্দকার তালহা

ইউনেসকোর সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০১:০১ এএম
ইউনেসকোর সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত বাংলাদেশ

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর ৪৩তম সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেসকোর স্থায়ী প্রতিনিধি খন্দকার এম তালহা এই মর্যাদাপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়েছেন, যা বাংলাদেশের কূটনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

ফ্রান্সের বাংলাদেশ দূতাবাস মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ইউনেসকোর নির্বাহী পরিষদের ২২২তম অধিবেশনে অনুষ্ঠিত ভোটে খন্দকার তালহা ৩০–২৭ ভোটে পরাজিত করেন জাপানের রাষ্ট্রদূত তাকেহিরো কানোকে। শুরুতে বাংলাদেশ, জাপান, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া সভাপতি পদে প্রার্থীতা দিয়েছিল; তবে গত সেপ্টেম্বরে ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেয়।

ইউনেসকোর সাধারণ পরিষদের ৪৩তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত উজবেকিস্তানের ঐতিহাসিক সমরখন্দ শহরের সিল্ক রোড কনফারেন্স সেন্টারে। সেখানে রোমানিয়ার রাষ্ট্রদূত সিমোনা মিরেলা মিকুলেস্কুর স্থলাভিষিক্ত হয়ে সভার সভাপতিত্ব করবেন খন্দকার তালহা। আগামী দুই বছরের জন্য তিনি এই শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করবেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাঁর সামাজিক মাধ্যমে জানান, ভোটে বাংলাদেশ ৩০–২৭ ব্যবধানে জাপানকে পরাজিত করেছে—যা বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অর্জন।

খন্দকার তালহা পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ১৯৯৫ সালে বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) এর ১৫তম ব্যাচে যোগ দেন। এরপর নিউইয়র্ক, তেহরান, জেনেভা ও লন্ডনে বাংলাদেশ মিশনে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ সালে তাঁকে ফ্রান্সে রাষ্ট্রদূত ও ইউনেসকোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

নির্বাচনে বিজয়ের পর খন্দকার তালহা তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এই অর্জন শুধু আমার নয়—এটি বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের সম্মিলিত সাফল্য। আমি এই দায়িত্বকে দেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার হিসেবে দেখছি।” তিনি প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ইউনেসকো নির্বাহী পর্ষদের সদস্যদের বাংলাদেশের প্রতি আস্থার জন্য ধন্যবাদ জানান।

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, “ইউনেসকোতে বাংলাদেশের সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়া নিঃসন্দেহে এক অসাধারণ অর্জন। এটি কেবল কূটনৈতিক সাফল্য নয়, বরং জাতীয় মর্যাদা ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার প্রতিফলন। এই সাফল্য বাংলাদেশের সফট পাওয়ারকে আরও শক্তিশালী করেছে।”

বিশ্লেষকদের মতে, ইউনেসকোর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় সভাপতির পদ অর্জন বাংলাদেশের কূটনৈতিক পরিসরে প্রভাব বিস্তারের নতুন সুযোগ তৈরি করবে। এটি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে দেশের নেতৃত্বের সক্ষমতা প্রদর্শনেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে