সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিয়ে নাগরিক ভাবনা তুলে ধরতে ৬ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় কুমিল্লা নগরীর হোটেল ওয়েসিসের হলরুমে একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সুশীল সমাজ, শিক্ষাবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধি অংশ নেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সুজন সুশাসনের জন্য নাগরিক কুমিল্লা জেলা ও মহানগর কমিটি, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মোঃ নাছির উদ্দীন এর সঞ্চালনায় সুজন কুমিল্লা জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক আলি আহসান টিটু মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরে একে একে হাউজের সকলে আলোচনায় অংশ গ্রহন করে। সভায় বক্তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকট, প্রশাসনিক প্রভাব এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার দুর্বলতায় জনগণের ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন গণতান্ত্রিক চর্চা থেকে দূরে ছিল বলে তারা মন্তব্য করেন। ফলে নাগরিকদের আস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।
সনাক কুমিল্লা সভাপতি নিখিল চন্দ্র রায় বলেন-গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা অত্যন্ত জরুরি বলে তিনি মত দেন। কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক দুলাল বলেন, “রাজনৈতিক দলে প্রথমে গণতন্ত্রে বিশ্বাস তৈরি করতে হবে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। গণতন্ত্রের কথা বলি, কিন্তু চর্চা করি না। ১৯৭১-এর পর রাজনৈতিক উন্নতির কোনো ইতিবাচক ধারাবাহিকতা দেখতে পাইনি। কথার ফুলঝুড়ির মধ্য দিয়ে নির্বাচনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কোনো লক্ষণ নেই।”
কুমিল্লা সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ডঃ আলি হোসেন চৌধুরী বলেন- “মানুষ এখন রাষ্ট্র নিয়ে ভাবছে- এটি আশার দিক।” “গণভোটের চারটি শর্ত কঠিন হয়ে গেছে, এগুলো সহজ করতে হবে।” “এমপি-দের জমিদারি প্রথা বন্ধ করতে হবে; তারা জনগণকে প্রজা ভাবতে পারেন না।” “নমিনেশন প্রক্রিয়া পরিবর্তন জরুরি, যাতে দল সংগঠনের যোগ্য ও সৎ মানুষকে মনোনয়ন দিতে পারে।” অবৈধ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও প্রতিপক্ষকে গ্রেপ্তার করে ‘গায়েল’ করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।” “জনগণ দেশের মালিক- এই বোধ সমাজে ফিরিয়ে আনতে হবে।” তিনি আরও বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচনী অনিয়ম থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয়ভাবে সমঝোতা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন অপরিহার্য। সভাপতির বক্তব্য - আলহাজ শাহ আলমগীর খান বলেন, “একজন নারী ১২৮ বার ভোট দিয়েছে- এমন অস্বাভাবিক ঘটনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের নিজেদের মধ্যেই পরিবর্তন আনতে হবে।” তিনি বলেন, নাগরিক সমাজের এই আলোচনা দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তারা বলেন, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু নির্বাচনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে জনগণের আস্থা কমে গেছে। গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য প্রয়োজন, সব রাজনৈতিক দলের সমান সুযোগ, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা,
নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ স্বাধীনতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেশাদারিত্ব, নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি, আরও যারা বক্তব্য রাখেন- দৈনিক নয়াদিগন্তের জেলা প্রতিনিধি মোঃ হাবিবুর রহমান চৌধুরী, ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র মোঃ আবু সাইদসহ নেতৃবৃন্দ।