কৃষি প্রধান বাংলাদেশে এক সময় লাঙ্গল ও গরুর হাল ছাড়া জমি প্রস্তুতের কথা চিন্তা করা যেতনা। কিন্তু কালের পরিক্রমায় তা হারিয়ে গেলেও অতীত ঐতিহ্য এখনো দেখা পাওয়া যায় দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার বেশ কিছু প্রত্যান্ত অঞ্চলের গ্রামে। গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় উপজেলার বলরামপুর গ্রামের বোরো ধানের জমিতে ধান রোপন করার জন্য কৃষক আলী হোসেন গরুর লাঙ্গল দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে দেখা গেছে। এসময় কৃষক হবিবরের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গরু হাল ও লাঙ্গল দিয়ে চাষ করতে বিঘা প্রতি এক হাজার থেকে এগারোশত টাকা পাওয়া যায়। তিনি আরও জানান, পূব পুরুষেরা এ কাজের জন্য জরিত ছিল। প্রতি বছর মৌসমে প্রতি দিন এক হাজার থেকে বারশত টাকা পাওয়া যায়। উর্পাজিত অর্থ দিয়ে গরুর খাদ্য ও সংসার খরচ হয়। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রের কারনে গরুর হালের কদর কমে গেছে। বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এক জোড়া হালের বলদ ক্রয় করতে বর্তমানে ২ লক্ষ টাকা প্রয়োজন হয়। এছাড়া খৈল, খড়, ভুষি, ঘাস সহ বিভিন্ন খাবার যোগাড় করে দিতে হয় গরু গুলোকে। অপর দিকে গরুর চোরের উপদ্রব ও বিভিন্ন রোগ বালাই এর কারনে কৃষকেরা যান্ত্রিক লাঙ্গলের দিকে ঝুকছে। তবে অনেক কৃষক মন্তব্য করেন, গরুর হাল লাঙ্গল দিয়ে চাষ করে ধান, পাট রোপন ও করলে ফসল খুব ভাল হয়। কারন হিসেবে তারা জানান, গরুর হাল দিয়ে চাষ করলে লাঙ্গলের ফালা মাটির গভীরে যায়, মাটির উর্বর শক্তি বৃদ্ধি পায়। এতে ফসল খুব ভাল হয়। ধনী ও মধ্যবৃত্ত কৃষকেরা পাওয়ার টিলার ও ট্রাকক্টর ক্রয় করে নিজের জমি চাষ আবাদ করছে আবার নিজের জমির চাষ করেও অন্যের জমি বিঘা প্রতি সাত টাকা ভাড়া দিয়ে চাষ করছেন। তাই ক্ষুদ্র কৃষকদের আর গরুর হালের বলদ ক্রয় করতে হয় না। এই কারনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গরুর হাল। কৃষক ছাত্তার জানান, গরু-মহিষ লাঙ্গল ও জোয়াল ছিল কৃষকদের আর্শীবাদ স্বরুপ। গরু-মহিষ, লাঙ্গল ও জোয়াল ছিল আমাদের ঐতিহ্য ও পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি। কিন্তু বর্তমান সময়ে কৃষিতে যান্ত্রিকরন প্রযুক্তির ব্যবহারে সরকার ৫০ ভাগ উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করছে কৃষকদের। ফলশ্রুতিতে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারে কৃষকেরা বেশী আগ্রহী হচ্ছে। তাই গরুর হাল হারিয়ে যাচ্ছে।