তীব্র গরমে ভোলার লালমোহনে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে রোগীর চাপে দিশেহারা চিকিৎসকগণ। ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে প্রতিদিন দ্বিগুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা গড়ে ২০ জন করে। রবিবার ডায়রিয়া আক্রান্ত রেদোয়ান নামে ৩ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার চরকচ্ছপিয়া গ্রামের মোঃ শাহীনের ছেলে রেদোয়ান ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে রবিবার সকাল ১০ টার দিকে জরুরী বিভাগে নিয়ে আসা হয়। এসময় ডাক্তার পরীক্ষা করে শিশুটিকে প্রাণহীন পান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তৈয়বুর রহমান জানান, ৫০ শয্যার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ বেড়েছে। প্রচন্ড গরমে ডায়রিয়াসহ শিশু রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় রোগী সামাল দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে ৮টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য ১৪ জন মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও রয়েছে মাত্র ২ জন। এর মধ্যে একজন নারী ডাক্তারের স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি ছুটিতে আছেন। বাকী মাত্র ১জন মেডিকেল অফিসার, ২ জন কনসালটেন্ট ও একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পুরো উপজেলার ৩ লাখ রোগীর ভরসা। তাদের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকলেও তিনি রোগী দেখেন। প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এখন। শনিবার একদিনে ১২১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৮৭ জন। ডায়রিয়া রোগী শনিবার ভর্তি হয়েছে ১৭ জন, রবিবার ১৯ জন। এর আগের দিন শুক্রবার ভর্তি ছিল ২০ জন। রোগী বেশি হওয়ায় বেড না পেয়ে ফ্লোরেই থাকতে হচ্ছে রোগীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে ৮টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানের কথা থাকলেও এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে কখনোই মেডিকেল অফিসার পাওয়া যায়না। তাদের পরিবর্তে সেখানে চিকিৎসা দিচ্ছে সেকমো পদের চিকিৎসকগণ। যার কারণে সব রোগীরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে আসে। আর উপজেলায়ও চিকিৎসার অপ্রতুলতার কারণে রোগীদের ভোগান্তির সীমা থাকে না। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাব, অপারেশন থিয়েটার তালাবদ্ধ বছরের পর বছর, প্যাথলজিতে নেই চাহিদা মতো পরীক্ষা নিড়ীক্ষার সরঞ্জামাদি। সব মিলিয়ে মহা সংকটে লালমোহনের চিকিৎসা ব্যবস্থা।
উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ডাক্তার সংকট থাকায় জরুরীভাবে চিকিৎসক চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পত্র পাঠিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তৈয়বুর রহমান। তিনি জানান, চিকিৎসক সংকট থাকায় আউটডোরে দৈনিক ৪০০-৫০০ রোগী, ইমার্জেন্সীতে দুই শতাধিক রোগী এবং অন্তঃবিভাগে শতাধিক রোগীর চিকিৎসা সেবা প্রদান করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তাই জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসক পদায়ন প্রয়োজন।