কাউখালীতে জমজমাট ধানের চারার ভাসমান হাট

এফএনএস (মোঃ রফিকুল ইসলাম রফিক; কাউখালী, পিরোজপুর) : | প্রকাশ: ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম
কাউখালীতে জমজমাট ধানের চারার ভাসমান হাট

আমন ধান আবাদের ধুম পড়েছে এখন উপকূলজুড়ে। কৃষক এখন কৃষি জমিতে আমন আবাদ নিয়ে মহাব্যস্ত। তবে এবার মৌসুমের শুরুতে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বীজতলার আমন চারা বিপন্ন হয়ে পড়ে। অনেক কৃষকের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। তাই কৃষকের আমন চারা সংগ্রহ করতে হচ্ছে হাট থেকে।

পিরোজপুরের কাউখালীতে এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ আমন চারার বিক্রয়ের ভাসমান হাট থেকে কৃষক আমন ধানের চারা সংগ্রহ করে সংকট মোকাবিলা করছে। আর কাউখালীতে যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা ভাসমান ধানের চারার বাজার এখন জমজমাট। সন্ধ্যা নদীতীরবর্তী কাউখালী শহরের দক্ষিণ বন্দর এলাকার চিরাপাড়া সেতুর কাছে নদীর পারে শুক্র ও সোমবার সপ্তাহে দুই দিন বসে আমন চারার এমন হাট।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, সূর্য ওঠার আগেই ভোরে বসেছে চারা বেচাকেনার হাট। উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষকেরা বিক্রির জন্য শত শত নৌকায় করে নিয়ে আসছেন ধানের চারা।

কৃষকেরা মাঠের পরিচর্যা করে চারা লাগাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মৌসুমের শুরুতে টানা বৃষ্টি, বৈরী আবহাওয়া ও বীজতলায় জলাবদ্ধতার কারণে অধিকাংশ কৃষক সময়মতো চারা উৎপাদন করতে পারেননি। 

উপকূলজুড়ে আমন চারা মোকাবিলায় বিপন্ন কৃষক ছুটে আসে ভাসমান চারার হাটে। এ হাটে কয়েক লাখ টাকার আমন চারা বেচাকেনা হয়।

স্থানীয় কৃষকরা জানায়, কাউখালী অঞ্চলের কৃষি জমি আশপাশের জনপদের চেয়ে জমি উঁচু বলে এখানে জলাবদ্ধতা তেমন নেই। ফলে এখানকার কৃষি জমির বীজতলা অন্য এলাকার চেয়ে টিকে থাকে।

এ কারণে অন্য এলাকার কৃষকরা আমন চারার সংকট কাটাতে কাউখালীর এ ভাসমান বীজের হাটে আসে। পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি ও মাদারীপুরের কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা এ হাটে বীজ কিনতে আসেন। পরিবহন সুবিধার কারণে নৌকা ও ট্রলারে করে ব্যবসায়ীরা ও কৃষকরা এখানে বীজের হাটে আসে।

এই হাটে আমন ধানের চারা পোন (৮০ মুঠো) হিসেবে বিক্রি হয়। প্রতি পোন চারার মূল্য ১হাজার’ থেকে ১২শ’ টাকা। এবছর চারা উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম অনেকটা কম বলে কৃষকরা জানান।

জেলার নাজিরপুর উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের তারা কিনতে আসা কৃষক সোহরাব হাওলাদার বলেন, আমন চাষের জন্য বীজতলা তৈরির বীজ-ধান সংগ্রহ করা, তা দিয়ে বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদনে বেশ সময় লাগে। তাই কৃষকেরা এই হাটে এসে প্রয়োজনীয় চারা কিনে নিয়ে জমিতে রোপণ করেন। এতে জমির মালিকদের অর্থ ও সময় দুটোই সাশ্রয় হয়।

চারা কিনতে আসা ঝালকাঠী জেলার রাজাপুর উপজেলার কৃষক মৃণাল কান্তি রায় বলেন, এখন ধানের জমি চাষ করতে শ্রমিক পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও তাদের দৈনিক মজুরি ছয় থেকে সাতশ’ টাকা দিতে হয়। এত টাকা খরচ করে বীজতলা তৈরির চেয়ে চারা কিনে চাষাবাদ করলে খরচ অনেক কম হয়।

কাউখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোমা রানী দাস বলেন, এই এলাকার জমি একটু উঁচু ও নদীবেষ্টিত হওয়ায় পানি জমতে পারে না। তাই কম সময় একই জমি থেকে সর্বোচ্চ লাভের এটি একটি আধুনিক প্রযুক্তি। তাই এখানকার কৃষকেরা জমিতে কয়েকবার আমন ধানের চারার বীজতলা তৈরি করতে পারেন। ইতোমধ্যে কাউখালী উপজেলার কৃষকরা গত বুধবার পর্যন্ত ২৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার আমন ধানের চারা বিক্রি করেছেন।  কাউখালী কৃষির একটি সম্ভাবনাময় দিক হলো ভাসমান বাজারে বীজতলা বিক্রি। এখানকার বীজ ভালো হওয়ায় কৃষকদের কাউখালীর আমন ধানের চারার প্রতি আগ্রহ বেশি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে