একটি বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শিক্ষকদের চাইতে অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিতরা যদি পরিচালনা পর্ষদে থাকেন বা সভাপতি হন, তখন তারা শিক্ষকদের অসম্মান করাসহ নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকেন। এতে শিক্ষার স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সভাপতিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করলেও অনেক ক্ষেত্রেই তাদের একাডেমিক শিক্ষা থাকে না। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে তারা অনেক শিক্ষকের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। ফলে শিক্ষার গুণগত মান রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়। এ অবস্থায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের যোগ্যতা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। বিশেষ করে কমিটির সভাপতি হতে হলে স্নাতক পাস হতে হবে। এমন বিধান রেখে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে।
কমিটির সভাপতিকে অন্তত স্নাতক বা ডিগ্রি পাস হওয়া জরুরি। এরকম হলে শিক্ষকসহ শিক্ষার্থী এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় ব্যক্তি, শিক্ষক, শিক্ষানুরাগী, জমিদাতাসহ বিভিন্ন প্রতিনিধি নিয়ে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন। অনেক ক্ষেত্রে এসব প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও শীর্ষ পদে বসছেন। ফলে শিক্ষার গুণগত উন্নয়নে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হচ্ছে না। উপরন্তু বিভিন্নভাবে শিক্ষকদের তটস্থ করাসহ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ আসছে। সেই অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ অন্য সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি সামনে চলে আসে।
প্রাথমিক বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক বিদ্যালয়ে কমিটির সভাপতি হিসেবে নিরক্ষর ব্যক্তিকে নির্বাচন করায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এমনকি কোনো অনুষ্ঠানে এসব ব্যক্তিরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও শিক্ষার মান বাড়াতে কোনো ধরনের সহায়তা ও দিকনির্দেশনা দেয়াসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনোবল তৈরিতে গঠনমূলক বক্তব্যও দিতে পারেন না। তাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বাড়াতে কমিটির সভাপতিকে অবশ্যই শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের কমিটির সদস্য করা যেতে পারে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিচালনা পর্ষদ, বিশেষতঃ সভাপতির বিদ্যালয় পরিচালনায় ব্যাপক ভূমিকা থাকে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য সভাপতির অনেক সিদ্ধান্ত ও পরামর্শ বাস্তবায়ন করা হয়। যদি সভাপতি অযোগ্য হন তবে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ জন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়াতে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। এটি বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিক শিক্ষার আমূল পরিবর্তন হবে।