দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় বলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সবার আগে আসে। ঐতিহাসিক কাল থেকেই বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনন্য। দেশের অনেক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি এখান থেকে পড়াশোনা করেছেন এবং অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তি এখানে শিক্ষকতা করেছেন। তবে গত এক দশক ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে হতাশার ছায়া নেমে আসতে দেখা যায়।
গতবছর লন্ডনভিত্তিক শিক্ষা বিষয়ক সাময়িকী ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে দুঃখজনকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল না। কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ বলেছিল, তালিকা করার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো ধরনের তথ্য সরবরাহ না করায় র্যাংকিংয়ে স্থান পায়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এটা যে এক ধরণের উদাসীনতা তা বলাই বাহুল্য।
এবছর সেই তালিকায় বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেরা এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেই। শিক্ষা বিষয়ক এ সাময়িকীটির ওয়েবসাইটে দেখা যায়, তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১০০১ এরও পরে। মাস চারেক আগে টাইমস হায়ার এডুকেশন তাদের পরিচালিত জারিপ অনুযায়ী এশিয়ার সেরা ৪১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করে, সেখানে বাংলাদেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল না।
২০১৬ সালের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের সেরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় ছয়শ থেকে আটশ’র মধ্যে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবনমন হতাশাজনক। শুধু লেখাপড়ার মান ও পরিবেশ নয়, সেরা বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণে আরও অনেক বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে সুনাম, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাত্রদের কর্মক্ষেত্রে সুনাম, দেশি-বিদেশি শিক্ষকদের অনুপাত এবং দেশি-বিদেশি ছাত্রদের অনুপাত। মূলত প্রাতিষ্ঠানিক খ্যাতি, শিক্ষক ও কর্মচারীদের দক্ষতা, শিক্ষক-ছাত্রের অনুপাত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিভাগীয় কৃতিত্ব তথা গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক পর্যালোচনার ভিত্তিতে জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু এগুলোর সব দিক থেকেই পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে ছাত্র-শিক্ষকদের অপরাজনীতি, দলবাজিসহ নানা অভিযোগ। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা, শিক্ষার্থীদের হলে সিট পাওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতাদের আনুকুল্য থাকা বাধ্যতামূলক হওয়াসহ কারণে-অকারণে সংঘর্ষ-সহিংসতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পড়াশোনার মান ব্যহত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক কমে গেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে পর্যাপ্ত অর্থের অপ্রতুলতা, অনুকূল পরিবেশের অভাব, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার অভাব ইত্যাদি। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার উৎকর্ষের চেয়ে প্রশাসনিক দিককেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া, কিছু শিক্ষকের শিক্ষা বিমুখতা ও শিক্ষকতার চেয়ে রাজনীতিতে সময় বেশি দেওয়া।
বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞান চর্চা এবং নতুন জ্ঞানের সন্নিবেশ ও উদ্ভাবন করার জায়গা। কিন্তু তা একদমই হচ্ছে না। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও ভালো করতে হবে। শিক্ষাখাতকে সরকার যেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সে অনুযায়ী অগ্রগামীতা নেই কেন তা খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।