সরকারি অফিসের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ফাঁকিবাজি নতুন কোনো খবর নয়। বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকার থেকে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। বিনিময়ে সরকার এবং জনগণও তাদের কাছ থেকে সঠিক সেবা পাবার আশা করেন। কিন্তু সরকারি অফিসের কেরানি থেকে অফিসার, আমলা পর্যন্ত অসহনীয়ভাবে কাজে ফাঁকিসহ অফিসে অনুপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি, তেমনি সরকারেরও ক্ষতি হয় বিভিন্নভাবে। এমনকি কিছুদিন আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি তার হতাশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারীরা বেশি বেতন পাচ্ছেন এবং আরও ভাল কাজ করার জন্য নিজেকে দায়বদ্ধ বোধ করছেন না।’ সচিবালয়সহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার সরকারি অফিসেও কর্তব্যরতদের যথা সময়ে খুঁজে পাওয়া দায়। আবার একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসে দেরিতে আসার পরও কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঊর্ধ্বতন কর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে অফিস শেষ হওয়ার আগে বাসায় চলে যান। বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে সরকারি বিভিন্ন অফিসে কর্মচারিদের অনুপস্থিতি যেন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
ফাঁকিবাজ সরকারি কর্মচারীদের ‘আসি যাই, বেতন পাই’ কর্মসংস্কৃতি বন্ধের উদ্দেশ্যে কড়াকড়ি আরোপ করেছে সরকার। সরকারি চাকুরেদের অফিসে নিয়মিত উপস্থিতির বিষয়ে নতুন বিধিমালা জারি করছে সরকার। গত ২ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ‘সরকারি কর্মচারী (নিয়মিত উপস্থিতি) বিধিমালা, ২০১৯’ জারি করেছে। ৫ ডিসেম্বর এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। বিধিমালায় বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো সরকারি কর্মচারী নিজ কর্মে অনুপস্থিত থাকতে পারবে না। কোনো কর্মচারী অনুমতি ছাড়া অফিসে অনুপস্থিত থাকলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর যুক্তিসঙ্গত সুযোগ দিয়ে কর্মচারীর প্রতিদিনের অনুপস্থিতির জন্য ১ দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কেটে নিতে পারবেন। এতে আরও বলা হয়েছে, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো সরকারি কর্মচারী অফিস ত্যাগ করতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, জরুরি প্রয়োজনে অফিস ত্যাগের ক্ষেত্রে সহকর্মীকে অবগত করে অফিস ত্যাগ করা যাবে। সংরক্ষিত রেজিস্ট্রারে অফিস ত্যাগের কারণ, সময়, তারিখ ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করতে হবে।
অভিযোগ রয়েছে, কেউ সকালে যথা সময়ে অফিসে যান না, কেউবা দুপুরে বাসায় খেতে গিয়ে সেদিন আর অফিসে ফেরেন না। বেশির ভাগ সময় ব্যক্তিগত কাজে বাইরে থাকেন। ঢাকায় বসবাস করা অনেক সরকারি কর্মকর্তা বুধবার অফিস করে বাড়ি চলে যান, পরবর্তী রোববার শেষ বেলায় অফিসে উপস্থিত হন। আর সঙ্গভাবেই অফিস-প্রধানদের অনিয়মের সুযোগ নিয়ে থাকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। কর্মস্থলে অবস্থান না করা ও অফিস ফাঁকি দেওয়ার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে কাজে আসা মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমরা আশা করি, নতুন বিধিমালা যেনো যথাযথভাবে কার্যকর করা হবে। কোনো ছলচাতুরি, বাহানা, অজুহাত বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিবেচনায় কাউকেই যেনো ছাড় দেয়া না হয়।