আমাদের দেশে মায়েরা স্তন্যপানকারী শিশুদের নিয়ে জনসমাগমস্থলে প্রায়ই বিড়ম্বনায় পড়েন। তাই এমন পরিবেশে ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপন করা জরুরি, যেখানে কোনো মা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে যেন কোনো অস্বস্তি বোধ না করেন। এক যুগেরও বেশি সময় আগে এটি করার জন্য আইন করা হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর শিশু কক্ষ সংক্রান্ত ৯৪ (৭) ধারায় বলা হয়েছে, ‘উক্তরূপ কোনও কক্ষ যথেষ্ট আসবাবপত্র দ্বারা সজ্জিত থাকিবে এবং বিশেষ করিয়া প্রত্যেক শিশুর জন্য বিছানাসহ একটি খাট বা দোলনা থাকিবে এবং প্রত্যেক মা যখন শিশুকে দুধ পান করাইবেন বা পরিচর্যা করিবেন, তখন তাহার ব্যবহারের জন্য অন্তত একটি চেয়ার বা এই প্রকারের কোনো আসন থাকিতে হইবে এবং তুলনামূলকভাবে বয়স্ক শিশুদের জন্য যথেষ্ট ও উপযুক্ত খেলনার সরবরাহ থাকিতে হইবে।’ দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের দেশে জনকল্যাণমূলক অনেক আইন থাকলেও তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনও ধরণের পদক্ষেপ দেখা যায় না। তাই জনসমাগমস্থলে মায়েদের জন্য বেস্ট্রফিডিং কর্নার না থাকায় তাদেরকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
এরই প্রেক্ষিতে ৯ মাস বয়সী এক শিশু ও তার মায়ের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৭ অক্টোবর সরকারি অথবা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল, হাসপাতাল, শপিং মল, বিমানবন্দর, বাস ও রেলওয়ে স্টেশনের মতো জনসমাগমস্থলে ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপনে পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সরকারি অথবা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল, হাসপাতাল, শপিং মল, বিমানবন্দর, বাস ও রেলওয়ে স্টেশনের মতো জনসমাগমস্থলে ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপনের পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শপিংমলে ব্রেস্টফিডিং ও বেবিকেয়ার কর্নার স্থাপনে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক সচিবকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তাও জানতে চান আদালত।
পরে গত মঙ্গলবার দেশের সব গামের্ন্টস ও শিল্প কারখানায় দুই মাসের মধ্যে ব্রেস্টফিডিং কর্নার ও বেবিকেয়ার কর্নার স্থাপন করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশ পালন করে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে শ্রম সচিব ও শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করবো, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশের সব গামের্ন্টস ও শিল্প কারখানায় ব্রেস্টফিডিং কর্নার ও বেবিকেয়ার কর্নার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হবে। এক্ষেত্রে শিল্প কারখানাগুলোকে বাধ্য করা ও যথাযথ তদারকির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মনিটরিং টিম গঠন করা যেতে পারে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে দেশের সরকারি-বেরসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শপিং মল, বিমানবন্দর, বাস ও রেলওয়ে স্টেশনের মতো জনসমাগমস্থলে বেস্ট্রফিডিং কর্নার চালু করতে হবে। বিশে^র বিভিন্ন দেশে অনেক আগের থেকেই এটি চালু থাকলেও বাংলাদেশে আইন করেও তা চালু করা যায়নি। এবার আদালতের নির্দেশে যদি ব্রেস্ট্রফিডিং কর্নার চালু করা যায় তাহলে তা-ই মন্দের ভালো।