৩০ বছর বয়সের খুশি মনি। থাকতেন ইতালিতে। দেশে ফিরেছেন এক সপ্তাহ আগে। সাথে ৭ বছরের মেয়ে সারজিনকেও নিয়ে এসেছেন। সেখানে করোনায় মহামারী আকার ধারণ করায় মা-বাবার বাড়ীতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য মেয়েকে সাথে নিয়েই বাংলাদেশে আসেন। স্বামী সাহেদ ইসলামকে ইতালীতেই রেখে আসেন। ইতালীতে নিজ চোখে করুন পরিণতি দেখে এসেও কোন শিক্ষা গ্রহণ করেন নি তিনি। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ উল্যা গ্রামে তার মা-বাবার বাড়ীতে ওঠেন। স্বামীর বাড়ী একই উপজেলার পদুমশহর গ্রামে। স্বামী বিদেশে চাকুরীর সুবাদে খুশি মনি সেখানেই বসবাস করতেন। দীর্ঘদিন পর বাড়ী ফিরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। বাদ যায়নি হাট বাজার ও স্বজনদের বাড়ীতে বেড়ানো। খুশি মনির ভাই রনি মিয়া মুঠো ফোনে তার বোনের কথা গুলো এ প্রতিনিধির কাছে বলছিলেন। বৃহস্পতিবার তার ভাইয়ের সাথে কথা হলে জানান, বিদেশ থেকে ঢাকায় নেমে বিমানবন্দরে পরীক্ষায় তার শরীরে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তাই তিনি সাধারণভাবে চলাফেরা করছিলেন। তবে এখন আর ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তাই খুশি মনি ও তার মেয়ে সারজিনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গাইবান্ধা সিভিল সার্জন এ.বি.এম আবু হানিফ ও সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডাঃ আরিফুজ্জামান গত বুধবার বাড়ী এসে হোম কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে বলে গেছেন। কেউ এ নির্দেশনা না মানলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হবে। শুধু খুশি মনিই নয়। উপজেলার অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলেও অনেকের অভিযোগ। এ চিত্র শুধু সাঘাটা উপজেলার নয়, সাড়া বাংলাদেশের ঠিক এমনই চিত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, শুধু হোম কোয়ারেন্টাইনে নয় অনেকে নূন্যতম সর্তকতায় থেকে মাস্ক পর্যন্ত পড়ছেন না। এসব কাজে উৎসাহিত করতে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। সাঘাটা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২ সপ্তাহে বিদেশ থেকে ১৯ জন এসেছেন। তারা হলেন, উপজেলার কুখাতাইড় গ্রামের রফিকুল ইসলামের পুত্র জাহিদ (৩৫), গটিয়া গ্রামের বাচ্চু মিয়ার পুত্র আবদুল ওয়াদুদ (২৫), গটিয়া গ্রামের হামিদুলের পুত্র আনিছুর রহমান (৩০), পাঠানপাড়া গ্রামের বিলাত আলীর পুত্র এনামুল হক জাকির (৩৬), দক্ষিণ উল্যা গ্রামের সাহেদের স্ত্রী খুশি মনি (৩০) ও তার কন্যা সারজিন (০৭), উত্তর দিঘলকান্দি গ্রামের সামছুল হকের পুত্র আবদুর রউফ (২৬), টেপা পদুমশহর গ্রামের রাজকান্ত বর্মণের পুত্র ভরত চন্দ্র (৬৫), শিমুলবাড়িয়া গ্রামের হাফিজারের পুত্র মিলন মিয়া (৩১), ডিমলা পদুমশহর গ্রামের মৃত আনছারুলের পুত্র সাফিউল ইসলাম (৩০), কৈচড়া গ্রামের আবদুল হাইয়ের পুত্র আনিছুর রহমান (৩০), রাঘবপুর গ্রামের মমতাজ আলীর পুত্র আশরাফ আলী (৪৫), বারকোনা গ্রামের আবদুল হকের পুত্র রবিউল (৩৫), ডিমলা পদুমশহর গ্রামের মোফাজ্জলের পুত্র সঞ্জু মিয়া (৩৫), জালালতাইড় গ্রামের মাহাতাবের পুত্র মশিউর (৪০), আব্দুল্লারপাড়া গ্রামের বুলুর পুত্র সুমন মিয়া (৩৮), মেছট গ্রামের জালাল উদ্দিনের পুত্র জাকিরুল (২৫), ডিমলা পদুমশহর গ্রামের আনছার আলীর পুত্র মজনু মিয়া (৪০) ও যাদুর তাইড় গ্রামের মজিদের পুত্র এনামুল হক (৩৫)। সাঘাটা হাসপাতালের টিএইচও ডাঃ আরিফুজ্জামান জানান, আমাদের স্বাস্থকর্মীরা স্ব-স্ব এলাকায় খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং বিদেশ ফেরতদের তালিকা দ্রুত সম্পাদন করে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। যদি কেহ এর ব্যতিক্রম করে তাহলে তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর জানান, করোনা ভাইরাস থেকে অন্যান্যের বাঁচাতে উপজেলায় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। সেই সাথে বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বিদেশ ফেরতদের মধ্যে যদি কেউ হোম কোয়ারেন্টাইন না মানে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।