কুড়িগ্রামের উলিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষের (ভারপ্রাপ্ত) বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে অফিস কক্ষের তালা ভাঙ্গার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা ৯৯৯ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাটি ঘটেছে, সোমবার দুপুরে। অধ্যক্ষের তাৎক্ষনিক বদলী আদেশের আটদিন পর সকলের অগোচরে তালা ভেঙ্গে অফিসে প্রবেশ করায় কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ এর স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয় ১৬ মার্চ উলিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু তাহেরকে বর্তমান কর্মস্থল হতে অবমুক্ত হবেন। অন্যথায় অপরাহ্নে তাৎক্ষনিক ভাবে অবমুক্ত মর্মে গণ্য হবেন। একই সঙ্গে জয়পুরহাটের মহীপুর হাজী মহসিন সরকারি কলেজের সহযোগি অধ্যাপক (হিসাববিজ্ঞান) হিসেবে যোগদান করার নিদের্শনা দেয়া হয়। এ ঘটনার আটদিন পর সোমবার দুপুরে অধ্যক্ষ আবু তাহের ও মাষ্টার রোলে কর্মরত কর্মচারী মোজাম্মেল হক কালুসহ বহিরাগত কয়েকজন যুবককে সঙ্গে নিয়ে উলিপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষের তালা (মিস্ত্রী দিয়ে) ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করেন। সেখানে কিছু সময় অবস্থান করার পর কক্ষের দরজায় নতুন তালা লাগিয়ে চাবি সঙ্গে নিয়ে চলে যান। এ ঘটনা স্থানীয়দের নজরে আসলে তারা ৯৯৯ এ ফোন করেন। এরকিছু সময় পর উলিপুর থানার এস আই আশরাফ আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ বিষয়ে উলিপুর সরকারি কলেজের ক্যাশিয়ার শামছুল আলম সবুজ বলেন, ঘটনার সময় কলেজের মসজিদে জোহরের নামাজ আদায় করছিলাম। ফিরে এসে দেখি, সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু তাহের স্যার তার কক্ষে বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে বসে আছেন। এর কিছুক্ষন পর তিনি দরজায় নতুন তালা লাগিয়ে কলেজ থেকে চলে যান। উপস্থিত স্থানীয়দের কাছে জানতে পারি তালা মেরামত করা মিস্ত্রী জনৈক আপেলকে ডেকে এনে কক্ষের তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করেন। এ সময় আমার সঙ্গে কলেজের অফিস সহায়ক ফজলুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
উলিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের হিসাব বিজ্ঞানের প্রভাষক আশাদুজ্জামান আরিফ বলেন, আজকে ছুটির দিন থাকায় কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী অনুপস্থিত ছিলেন। এ সুযোগে কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু তাহের তালা ভেঙ্গে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করেন। কিছু সময় পর তিনি নতুন তালা লাগিয়ে চলে যান। তিনি আরও বলেন, গত ১৬ মার্চ তাৎক্ষনিক ভাবে বদলীকৃত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তালা ভেঙ্গে এভাবে প্রবেশ করা সম্পূর্ণ বেআইনী। এ বিষয়ে শিক্ষক পরিষদের মিটিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উলিপুর থানার এস আই আশরাফ আলী জানান, ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে ঘটনস্থলে গিয়ে দেখি অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দেয়া। এ সময় অধ্যক্ষকে সেখানে পাইনি। তবে শুনেছি অধ্যক্ষ সাহেব এসেছিলেন।
উলিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু তাহের সোমবার কলেজে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, শিক্ষক মোস্তফা সাহেব আমার কক্ষে তালা মেরে চাবি নিয়ে যান। কক্ষের ভিতরে আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ চেক বই ছিল। সে কারণে তালা খুলে সেগুলো নিয়ে এসেছি। তাৎক্ষনিক ভাবে বদলী আদেশের পরও কেন তিনি এ কাজ করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদেশটি ভুল ছিল। আমি এখন পর্যন্ত কারো কাছে কলেজের দায়িত্ব হস্তান্তর করিনি।
উল্লেখ্য, অধ্যক্ষ আবু তাহের গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে শহীদ বেদিতে জুতা পায়ে উঠে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। ওই সময় ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে স্থানীয়রা তার বিচারের দাবীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য স্মারকলিপি প্রদান করেন।