কুয়াকাটার অত্যাধুনিক আবাসিক হোটেল খান প্যালেস এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ম্যানেজার, বয়সহ ৩০ জন কর্মচারীর ২০ জনকে প্রথম দফায় ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছুটি দিয়েছেন। এখন ছুটি বেড়েছে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এই ছুটি আরও বাড়তে পারে এমন ধারনা সকলের। শুধুমাত্র নিরাপত্তা ও প্রতিদিনকার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কয়েকজনকে কাজে বহাল রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সকল স্টাফের বেতনভাতা পরিশোধ করতে হবে। এজন্য গুনতে হবে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা। ব্যবসা বন্ধ থাকায় বর্তমানে দৈনিক অন্তত লাখ টাকার কালেকশন থেকে বঞ্চিত রয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এ হোটেলের পরিচালক রাসেল খান জানালেন এসব তথ্য। করোনার প্রভাব প্রতিরোধে কুয়াকাটায় পর্যটক ভ্রমণে সরকারি নিষোধাজ্ঞার কারণে ১৮ মার্চ থেকে হোটেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই দশা কুয়াকাটা গেস্ট হাউসের মালিক আবদুল মোতালেব শরীফের। তিনি জানালেন, ২০ জন স্ট্যাফের দুইজন ছাড়া সকলকে ছুটি দেয়া হয়েছে। দুইজনকে রাখা হয়েছে। এরপরে করোনার প্রভাবে হোটেল বন্ধ রাখলে কীভাবে বেতনভাতা দিবেন তা জানা নেই। সমুদ্র্র বাড়ি রিসোর্টের জহিরুল ইসলাম মিরন জানান, তাঁদের ছোট্ট হোটেলের চারজন স্টাফ ছুটি দিয়েছেন। তবে বেতন গুনতে হবে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। ইলিশ পার্কের সত্ত্বাধিকারী রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানালেন, তার দুইটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা স্টাফ ছাড়া বাকি ১০জনকে ছুটি দিয়েছেন। কিন্তু গুনতে হবে বেতনভাতা। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, কুয়াকাটার শতাধিক হোটেলে কর্মরত অন্তত দেড় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী এই মুহুর্তে বেকার হয়ে গেছেন। কিন্তু কোটি কোটি টাকার বেতনভাতা গুনতে হবে মালিকদের। মরনঘাতক করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আরো দীর্ঘসময় সংক্রমিত হলে এ ব্যবসা বন্ধের শঙ্কা রয়েছে। এত গেল শুধু আবাসিক হোটেলের অবস্থা। এছাড়াও অর্ধশত খাবার হোটেল। সৈকতে প্রায় দেড় শ’ বাণিজ্যিক ফটোগ্রাফার, ৪০ জন ছাতা বেঞ্চি ব্যবসায়ী, ফিশ ফ্রাই, চটপটিসহ ক্ষুদে দোকানি রয়েছে আরও ১৫০ জন। ট্যুরিস্ট বোট মালিকসহ কর্মচারী রয়েছে আরও ১৫০ জন। রয়েছে ভাড়াটে মোটরসাইকেল চালক, অটোবাইক, ভ্যান-টমটমচালক দুই শতাধিক। কুয়াকাটায় সাগরের অগভীর এলাকায় মাছ ধরা খুটা জেলেদের সংগঠন আশার আলো জেলে সমবায় সমিতির সভাপতি নিজাম শেখ জানান, তাদের নিয়ন্ত্রিত ২৪০০ জেলে পরিবার সম্পুর্ণভাবে বেকার হয়ে আছে। এদের এখন দিন চলছে চরম মানবেতর। এভাবে সব মিলিয়ে শুধুমাত্র কুয়াকাটায় কমপক্ষে হোটেল ব্যবসার তিন হাজার কর্মজীবীসহ মোট সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার বেকার হয়ে পড়েছে করোনার প্রভাবে। এসব পরিবারে দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজ করছে। মার্চ মাসের পরেও যদি মরনব্যাধি করোনা প্রতিরোধ না হয়, কিংবা অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে তাইলে কুয়াকাটায় পর্যটনকেন্দ্রীক জীবন-জীবিকা নির্ভর সরাসরি তিন হাজার ছাড়াও পরোক্ষভাবে আরও দুই হাজার পরিবার বেকার হয়ে পড়েছে। এখানকার অর্থনীতিতে এক ধরনের ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দেয়ার শঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এসব ব্যবসায়ীরা। তারপরও এসব ব্যবসায়ীসহ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সাধারণ মানুষ এ লোকসান মেনে নিয়ে সবার কামনা করোনার মরন থাবা থেকে সারা বাংলাদেশসহ পর্যটন এলাকার মানুষ রক্ষা পাবেন। এমন প্রত্যাশা সকলের মনে। সবাই অপেক্ষা করছেন সেই শুভক্ষণের। তবে জেলে পরিবারের সদস্যদের বিশেষ ভিজিএফএর চাল বিতরণ কার্যক্রম চলছে বলে জানালেন কলাপাড়ার ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক। একই তথ্য দিলেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা।