সরাইলের পল্লী এলাকা জয়ধরকান্দি গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে আধা কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক। চীন প্রবাসী মো. গাউছ মিয়ার অর্থায়নেই শতাধিক বছরের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়েছে গ্রামবাসীর। দূর্ভোগ লাঘব হয়েছে নারী পুরূষ ও শিক্ষার্থীসহ সহস্রাধিক লোকের। শতাধিক বছর ধরে এমপি মন্ত্রীরা যা পারেননি। তা করে দেখিয়েছেন গাউছ। নিজ গ্রামে মানবিক কাজটি করে এখন সুখ অনুভব করছেন গাউছ। আর উদ্যোক্তার জন্য দোয়া করছেন ভুক্তভোগীরা। সরজমিনে গেলে গ্রামবাসী জানায়, পাকশিমুল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড জয়ধরকান্দি গ্রামের পূর্বপাড়া। একসময় এ গ্রামে মানুষ চলাচলের রাস্তা ছিল খুবই সরূ। চলাফেরায় কষ্টে মানুষের শ্বাস বন্ধ হয়ে আসত। ঘর থেকে বের হলেই দূর্ভোগ। কষ্টের সাথে যুদ্ধ করেই বসবাস করছিল ওই জনপদের মানুষ গুলি। বৃষ্টি হলে তো কাঁদা পানিতে একাকার। ওই গ্রামের আবদুল আলীর ছেলে গাউছ মিয়া। কে জানত তার হাত দিয়েই আসবে সুখ? শিশু কিশোর কাল কাটিয়েছেন গ্রামে। লড়াই করেছেন কষ্টের সাথে। মানুষের কষ্টও দেখতেন। ভাবতেন কখন এবং কবে শেষ হবে এসব দৃশ্য? আসলে কি কখনো হবে? ইচ্ছে ছিল। ছিল না সাধ্য। সরাইল সদরের কুট্রাপাড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে গাউছ মাধ্যমিক পাস করেছেন। এরপর আর পিছনে ফিরে থাকাননি। পাড়ি জমান প্রবাসে। প্রথম সৌদী আরবের জেদ্দা। সেখানে ৪ বছর থেকেছেন। পরে চলে যান চীনের গোয়াঞ্জু সিটিতে। শুরূ করেন ব্যবসা। সফল হন তিনি। ১৪ বছর আগে বিয়ে করেছেন। তার ৩টি ছেলে সন্তানের জন্মও চীনেই। বছরে ২/১ বার নিজের গ্রামের বাড়িতে আসেন। নারীর টানে গ্রামে এসে মানুষকে সহায়তা করছেন নিয়মিত। এ ছাড়া মসজিদ, মাদরাসা সহ সামাজিক কর্মকাণ্ডে এগিয়ে যাচ্ছেন। গত ২৫ শে ফেব্রƒয়ারি ওমরা হজ্জ্ব করার উদ্যেশ্যে গ্রামে আসেন গাউছ। হজ্জ্ব শেষে এপ্রিলে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু করোনার কারণে আটকে যান। এখনো যেতে পারছেন না চীনে। সম্প্রতি জয়ধরকান্দি গ্রামের রাস্তায় মানুষের চলাফেরার কষ্ট স্বচোখে দেখেন গাউছ। এই কষ্ট দূর করার চিন্তা করেন। যেখানে শতাধিক বছর ধরে এমপি মন্ত্রীসহ সকল জনপ্রতিনিধিই আশ্বাসের বাণী শুনিয়ে গেলেন। সেখানে শুধু একজন ব্যক্তি গাউছ কি পারবেন? ওই জনপদের হাজারো মানুষের দীর্ঘ দিনের কষ্ট লাঘব করতে? হ্যাঁ, গাউছ পেরেছেন। প্রতিবেশীদের নিয়ে শুরূ করেন সড়ক নির্মাণের কাজ। বাজারে যাওয়ার খেয়াঘাট থেকে গ্রামের মাঝখান দিয়ে পূর্বপাড়া খেয়াঘাট পর্যন্ত। পশ্চিম দিকে মাধ্যামক বিদ্যালয় ও মাদরাসা পর্যন্ত। দুইদিকে প্রায় আধা কিলোমিটার সড়ক নিজের টাকায় একফুট উচুঁ করে ইট দিয়ে সলিং করেছেন। সড়কটি গড়ে ৭ ফুট প্রস্থ। ৪০ হাজার ইটা, বালি সিমেন্ট ও শ্রমিক বাবদ ৬ লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছেন। স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলে এ সড়ক দিয়ে এখন হাটছেন গ্রামবাসী। পার্শ্ববর্তী মহিষবেড় গ্রামের ১৮০ জন শিক্ষার্থীর দূর্দিন শেষ। তারা এখন হেসে খেলে এ সড়ক দিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ মনখুলে দোয়া করছেন। ব্যক্তি উদ্যোক্তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি। সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল আহাদ, জয়ধরকান্দি পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আইয়ুব খান ও যুবলীগ নেতা মোছেন আহমেদ বলেন, গাউছ সড়কটি করে শুধুু সাধারণ মানুষ নয় ২টি মসজিদের মুসল্লি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, মা ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, নূরূল ফোরকান হাফেজিয়া মাদরাসা সহ সকলের দীর্ঘদিনের কষ্ট দূর করেছেন। গ্রামের চিত্রই এখন পাল্টে গেছে। একেই বলে মানবসেবা। দেশের বাহিরে থাকলেও গ্রামের প্রতি তার যথেষ্ট ভালবাসা রয়েছে। গাউছ মিয়া বলেন, মহিলা ও শিক্ষার্থী সহ অধিকাংশ মানুষের দূর্ভোগ আমাকে ভাবিয়েছে। এলাকার জন্য ভাল কিছু করতে পারলে আমার খুব ভাল লাগে। সড়কটি করতে পেরে আমি খুুবই সুখ অনুভব করছি।