আল কোরআনের সূরা তওবা’র ৬০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে ৮ ধরনের মানুষের মাঝে ফিতরার টাকা বিতরণ করা যাবে। কিন্তু তা না করে সরকারের সাথে মামলায় লড়াই করতে সদাকাতুল ফিতরা, কবরস্থানের টাকা খরচ করছে মামলায়। এনিয়ে কেউ কেউ আপত্তি করলে তাদের পড়তে হয়েছে ঝুঁকির মুখে। এ ঘটনা ঘটেছে ভোলাহাট উপজেলার চরধরমপুর বড় জামে মসজিদের ৬ জামায়াতের মধ্যে। তাতীপাড়া মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানে অন্দরে হাল দাগ নম্বর ৩০০ জমির পরিমাণ ৩.১১ একর। সম্পত্তিটি ভোলাহাট ও গোহালবাড়ী ইউনিয়ন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে উভয় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ আদালত পর্যন্ত যায়। অবশেষে সম্পত্তিটি ভোলাহাট ইউনিয়নের আওতায় চলে যায়। পরে চরধরমপুর গ্রামের একটি চক্র ব্যক্তিগত স্বার্থে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলা চলতে থাকলে নেত্রীত্ব দেন চরধরমপুর বড় জামে মসজিদের সভাপতি মাওঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাইদুর রহমান, মোঃ আজিজুল হক, মোশারফসহ বেশ কিছু ব্যক্তি।
চরধরমপুর বড় জামে মসজিদের সাবেক সেক্রেটারি মোঃ আবদুর রশিদ জানান, গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে চিহ্নিত চক্রটি মসজিদের আওতায় ব্যাংকে রাখা তিনটি কবরস্থানের ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা সম্প্রতি বনজ গাছ, আম বিক্রিসহ প্রায় ১লাখ ৫০ হাজার, সম্প্রতি ফিতরার প্রায় ১লাখ ৬০ হাজার টাকা মামলা চালার নামে তছনছ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বড় মসজিদের ৭ জামাতের মধ্যে মোঃ আবদুল মতিনের জামায়াতের লোকজন বাধা দিলে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়। এদিকে এ ঘটনায় গ্রামের প্রায় ৮/১০ জনকে একঘরে করে রেখেছে ঐ চক্র। তাদের কাছ থেকে ফিতরা নেয়া হয়নি।
চরধরমপুর বড় জামে মসজিদের ৭ জামায়াতের মধ্যে ২ নম্বর মোঃ আবদুল মতিনের জামায়াতের মন্ডল মোঃ আব্দুুল মতিন ৫ ফেব্রয়ারি বড় জামে মসজিদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পদক বরাবর লিখিত ভাবে গচ্ছিত টাকা সরকারি কবরস্থানে খরচ করা না হয় মর্মে কবরস্থান ও মসজিদ কমিটির নিকট হস্তান্তর করার জন্য অনুরোধ করেন।
এ মসজিদের একজন সচেতন মানুষ নামপ্রকাশ না করার শর্তে জানান, অনেক দিন পূর্বে হিন্দুর সম্পত্তির অর্থ দিয়ে মুসলমানের কোন কাজ করা যাবে না এবং হিন্দুর জমিতে কোন মুসলমানকে কবর দেয়া যাবে না বলে একজন বিশিষ্ট মাওলানা বলেছিলেন। এদিকে সরকারি জমি নিয়ে করা মামলায় ফিতরা, কবরস্থান ও মসজিদের টাকা খরচ করায় সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নামপ্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন বলেন, ঐ মসজিদ এলাকায় মোট ৯ টি জামায়াত থাকলেও ৭ জামায়াত প্রধানেরা নিজেদের নেত্রীত্ব পাকাপোক্ত করে রাখতে ২ টি জামায়াতকে বাইরে রেখেছেন এবং তাদের অন্তরভূক্ত ১ টি জামায়াতকে কোন মুল্যায়ন করেন না।
মিস্ত্রীপাড়ার ৭০ বছর বয়স্ক বিধবা রাশিদা বলেন, তিনি তাঁর মেয়ের বাড়ীতে থাকেন। ভিক্ষা করে তাঁর জীবন চলে। এ বছর নিজ গ্রাম চরধরমপুর বড় জামে মসজিদ থেকে ফিতরার টাকা পাননি তিনি। একই গ্রামের ৭০ বছরের বিধবা হাসিনা বলেন, আমার বাড়ী ঘর নেই। মাদ্রাসায় থাকি। ভিক্ষা করে চলি। এবছর চরধরমপুর বড় জামে মসজিদ থেকে ফিতরার টাকা পায়নি বলে নিশ্চিত করেন। একই কথা বলেন ৬৫ বছরের বিধবা উলুন বেগমের মেয়ে রেনু।
এদিকে সরকারের বিরুদ্ধে করা মামলায় হেরে য়ায় তারা। রায় হয় সরকারের পক্ষে। রায় পেলে এ স্থানে সরকারের দেয়া গৃহহীনদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার বাড়ী করে দেয়ার উদ্দেশ্যে ৫ মে সরকারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অঃচাঃ) মোঃ শেখ মেহেদী ইসলাম, বিজ্ঞ আদালতের প্রতিনিধি এ্যাড মোঃ আবদুস সামাদ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ কাউছার আলম সরকার, ভোলাহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াজদানী জর্জসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সেখানে যান। তাঁদের উপস্থিতে চক্রটি মসজিদের মাইকে মাইকিং করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলার ঘটনায় ভোলাহাট থানায় অর্ধশতাধিক নামে ও অজ্ঞাত নামাকে অভিযুক্ত করে মামলা করা হয়। ধর্মীয় ভাবে প্রচারনা চালিয়ে একটি চক্র সাধারণ মানুষকে বিপথে পরিচালিত করছেন। সেই সাথে নিজ স্বার্থে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের টাকা যথাযথ জায়গায় ব্যয় না করে মামলার নামে লুটপাট করেছেন একটি চক্র। এসব অভিযোগ করেছেন ঐ গ্রামের কিছু ব্যক্তি। তাঁরা অভিযোগ করার সময় বার বার তাঁদের নাম প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন। তাঁদের নাম প্রকাশ করলে চক্রের হামলার শিকার হবেন বলে জানান।
এদিকে জসিমুদ্দীন বিশ্বাসের জামায়াতের মড়ল মোঃ কসিমুদ্দীন মামলায় ফিতরার টাকা খরচ করার বিষয়টি স্বীকার করেন। তোবজুল সর্দারের জামায়াতের মন্ডল ও কবরস্থানের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আজিজুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফিতরা ও মসজিদের দানের টাকা মামলায় খরচ করা হচ্ছে বিয়ষটি অস্বিকার করেন।
এ ব্যাপারে মসজিদের সভাপতি মাওঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম তিনি বলেন, ফিতরা ও মসজিদের টাকা মামলাতে ব্যয় করা হয়নি। সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, ফিতরা ও মসজিদের দানের টাকা মামলায় খরচ করা হয়নি। মামলায় খরচের কথা যেটা বলা হচ্ছে তা সম্পন্ন অসত্য ও গুজব। সংশ্লিষ্ট চরধরমপুর বড় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোঃ আজিমুদ্দিন বলেন, ফিতরা ও মসজিদের দানের টাকা মামলায় খরচ করা যাবেনা।
ভোলাহাট উপজেলা কেন্দ্রীয় মসজিদের পেস ইমাম মাওলানা মোঃ আবদুল কাদের জানান, নিরহ কোন মুসলমানকে মুক্তির ক্ষেত্রে সাদাকাতুল ফিতরের কিছু অংশ টাকা যদি ব্যয় করে তাহলে এটা বৈধ হবে। তবে সবার ক্ষেত্রে ফিতরার সম্পন্ন টাকা ব্যয় করা যাবেনা। তিনি আরো বলেন, কোন বিধর্মী যদি ইসলাম বা মুসলমানদের কল্যাণে নিজ অর্থ সম্পদকে ব্যয় করে থাকেন এবং ঐ অর্থ সম্পদের উপর মালিকের কোন দাবী দাওয়া না থাকে বা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্য বা প্রভাব খাটানোর উদ্দেশ্য কোন রকম চক্রান্ত করে না থাকে তাহলে ওই সম্পদকে ইসলাম বা মুসলমানদের কল্যাণে ব্যয় করা বৈধ হবে (ফতুয়া সামি)।