বাংলাদেশ উন্নত দেশ নয়। দক্ষিণ এশিয়ার জনসংখ্যা অধ্যুষিত ছোট একটি দেশ যেটি স্বল্পন্নোত দেশের গন্ডি পেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের পথে পা রেখেছে। রোহিঙ্গা সমস্যা দেশের জন্য ক্রমেই এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটনশিল্প, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ অনেক বিষয়েই হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীরা। আবার কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের ওপর এত বেশি চাপ সৃষ্টি হয়েছে যে তারাও রীতিমতো দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। রোহিঙ্গা সমস্যার আশু সমাধান বা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত না হলে দেশের পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে। বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, প্রবল বৈশ্বিক চাপ ছাড়া মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের কখনোই ফিরিয়ে নেবে না। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বিশ্বকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার রাতে ফ্রান্সে ‘প্যারিস পিস ফোরামে’ বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এই আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গারা যাতে দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে তা নিশ্চিত করতে বিশ্বকে অবশ্যই গুরুত্বসহকারে কাজ করতে হবে। অন্যথায় সংকট থেকে তৈরি নিরাপত্তা ঝুঁকি শুধু বাংলাদেশের সীমানায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। এরইমধ্যে তার লক্ষণ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। গত সেপ্টেম্বরে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটস নামে একটি সংগঠনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিব উল্লাহকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নভেম্বরের শুরুতে কথিত আরসা নেতা মোহাম্মদ হাসিমের লাশ পাওয়া যায়। অনুপ্রবেশের পর থেকেই রোহিঙ্গারা কক্সবাজার ছেড়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। অনেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহেরও চেষ্টা করেছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটনশিল্প, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ অনেক বিষয়েই হুমকির সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি অস্ত্রের কারখানাও পাওয়া গেছে সেখানে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ফ্রান্সের সব নেতার সঙ্গে, বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক চলাকালে রোহিঙ্গা ইস্যুর ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফ্রান্সের নেতাদের বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এই সংকটের সমাধানে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের চেষ্টা করছে। এমনকি আন্তর্জাতিক আদালতেও গেছে। ফ্রান্স জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ হওয়ায় এই পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ফ্রান্সের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ফ্রান্স বলেছে, তারা রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
রোহিঙ্গা সংকট ক্রমেই জটিল হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো একটি দুর্বল অর্থনীতির দেশের পক্ষে দীর্ঘকাল ধরে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ভার বহন করা সম্ভব নয়। তদুপরি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন অপরাধীচক্র রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে নানা ধরনের অপরাধ নেটওয়ার্ক তৈরিতে তৎপর রয়েছে। রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা আরো জোরদার করা হবে এটাই কাম্য।