জন্ম থেকেই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না প্রিতিলতা সাহা (১৭)। তার দুই পায়ে কোনো শক্তি নেই, তবে আছে তার মনের শক্তি। বান্ধবীদের সহযোগিতায় হুইল চেয়ারে স্কুলে যাওয়া আসা করে সে। এভাবে পড়াশোনা করে প্রিতিলতা এবার মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৪ দশমিক ৫৬ পেয়েছে। তবে প্রিতিলতা বাড়ি থেকে কলেজ অনেকটা দূরে হওয়ায় তার কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
প্রিতিলতা যশোর সদর উপজেলার বারিনগর গ্রামের মৃত প্রশান্ত সাহার মেয়ে। মাত্র ৬ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছে প্রিতিলতা। স্বামীর মৃত্যুর পর প্রিতিললতার মা সুজাতা সাহা মেয়েকে নিয়ে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার মোস্তবাপুর গ্রামে তাঁর বাবার বাড়িতে ওঠেন। ছোটবেলা থেকেই প্রিতিলতার পড়াশোনার প্রতি বেশ আগ্রহ। সেই আগ্রহের কারণে প্রিতিলতার নানা শান্তি স্মরণ সাহা তাকে বাড়ির পাশের মোস্তবাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। নানার সাইকেলের পেছনে চড়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করত প্রিতিলতা। ধীরে ধীরে তার বান্ধবী ররুনা, জয়া, ইভা আর দোলন এগিয়ে আসে।
প্রিতিলতা জানায়, স্কুলের শিক্ষক সহপাঠী সবার সহযোগিতায় সে ভালো ফল করতে পেরেছে, তবে সে এখন কোন কলেজে ভর্তি হবে, সেটা নিয়েই চিন্তিত। তার বাড়ি থেকে সবচেয়ে কাছে কালীগঞ্জ শহরের ফয়লা এলাকার শহীদ নূর আলী কলেজ। এখানে ভর্তি হলেও প্রতিদিন তাকে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে হবে, যা তার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। প্রিতিলতার নানাও মারা গেছেন। ফলে সে এখন একা হয়ে পড়েছে।
এদিকে সুজাতা সাহা দৈনিক ২০০ টাকার চুক্তিতে একটি কারখানায় কাজ করেন। সকাল আটটা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত কারখানাতেই থাকেন তিনি। তাই মেয়েকে কলেজে নিয়ে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনিও কোনো সহযোগিতা করতে পারবেন না। মেয়ে কে সহযোগিতা করতে হলে দেনিক হাজিরা বন্ধ হয়ে যাবে।
সুজাতা বলেন,২০১১ সালে তাঁর স্বামী প্রশান্ত সাহার মৃত্যুর পর তাঁদের গ্রামের বাড়ির জায়গাও হাতছাড়া হয়ে যায়। এখন তাঁদের কোনো থাকার জায়গা নাই। কালীগঞ্জের মোস্তবাপুর গ্রামের অগ্নি সাহা নামের এক ব্যক্তি তাঁদের আশ্রয় দিয়েছেন। এখন কলেজের কাছে থাকার ব্যবস্থা করতে পারলে মেয়েকে কলেজে পড়াতে পারতেন। কিন্তু প্রিতিলতা লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায়। কিভাবে সে কলেজে ভর্তি হবে সেটা নিয়ে শংশয় রয়েছে।
প্রিতিলতার শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, সে নানা প্রতিবদ্ধকতার জয় করে এসএসসিতে ভালো ফল করেছে। কিন্তু সে কলেজে ভর্তি হতে পারবে কি না, সেটা অনিশ্চিত। তারপরও মেয়েটির মনের জোর রয়েছে। তাই শিগগিরই কোনো একটা সমাধান বের হবে বলে আশা করেন তিনি।