এক সময়ের মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবি কালিপদ দাশ (৩০) এখন কামিনী ফুলের পাতা বিক্রয় করে কোন রকমে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বেশ সুখে আছে।
এক সময় কালিদাশের হাঁটতে গেলেও মনে হতো-পিছনে পুলিশ আসছে। তবে কালিদাশ বেশ কয়েক বার জেলের ঘানি টেনেছে। এখন সব কিছু বাদ দিয়ে একটা ভ্যান গাড়ী কিনে চালায়। কিন্তু রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। তাছাড়া এখন ব্যাটারী ভ্যান বৃদ্ধি পাওয়ায় তেমন ভাড়া না হওয়ায় বিকল্প পেশা হিসেবে কালিপদ দাশ কামিনী ফুলের পাতা বিক্রয় করে সংসারের জীবিকা নির্বাহ করে। কালিদাশ জানান, তালার প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে যেয়ে বিভিন্ন বাড়ি থেকে এই কামিনী ফুলের পাতা ক্রয় করি এবং ২০ টাকা আটি বিত্রয় করি।
তিনি আরো জানান, তার এই পাতা ঢাকা ও চট্টগ্রামে রপ্তানি হয়। তবে কালিপদ দাশ জানান, বিভিন্ন দিবসে এই পাতা বেশি বিক্রয় হয়। যেমন ২১ ফেব্রুযারী, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চসহ বিশেষ দিনে এই ফুলের চাহিদা বাড়ে। কালিপদ দাশ অতি আক্ষেপ করে বলেন, তার পিতা-মাতা কেউ নেই। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি মেঝ। বাকী দু’ভাই আলাদা থাকে। তবে কালিদাশের পিতা-মাতা পরের জমিতে ঘর বেঁধে থাকতেন। তারা মারা যাওয়ার পর কালিদাশ তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে সেই বাড়িতে থাকেন। বর্তমান সেই পরের জায়গা তালার বাগমারা গ্রামের জমিদার সুধীর চ্যাটার্জীর বাড়িতে তারা বসাবস করেন। নিজের বলতে তাদের কোন জমি নেই। দীর্ঘ ৩০-৪০ বছর যাবত তারা এভাবে যাযাবর হিসেবে বাস করে আসছেন। কালিপদ দাশ কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে জানান, তারা সরকারি সাহায্য বলতে কোন কিছু পায় না। মেম্বর বা চেয়ারম্যান তাদের কোন অনুদান দেয় না। কালিপদ দাশ তালা উপজেলার বাগমারা গ্রামের মৃত শিবুপদ দাশের পুত্র। কালিপদ দাশ এ প্রতিনিধিকে জানান, লজ্জার কিছু নেই। এখন আর মাদক খাই না। বিক্রিও করি না। কারণ আমার একটা ছেলে আছে। সে বড় হচ্ছে। তার ভবিষ্যৎ আছে। সব কিছু চিন্তা করে ঐ অপকর্মের পথ ছেড়ে দিয়েছি। কালিপদ দাশ আরো জানায়, আমি তালা উপজেলার প্রতিটি গ্রামে যেয়ে এই কামিনী ফুলের পাতা কিনে বিক্রয় করে মোটামুটি রোজগার করি। তবে সে আরো জানায়, আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কামিনী ফুলের চাহিদা বাড়বে। সেই হিসেবে প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।