বিস্ফোরক দ্রব্য সংকট পড়ায় মধ্যপাড়া খনির পাথর উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করেছে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া খনি কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, পাথর উত্তোলনের অন্যতম কাঁচামাল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেডের (বিস্ফোরক) অভাবই উৎপাদন বন্ধের মূল কারণ। এ সংকট কাটিয়ে পাথর উত্তোলনের কাজ সহসা চালু হওয়ার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ বলে জানা গেছে। এর ফলে সরকার প্রতি মাসে অন্তত ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে। শুধু তাই নয়, এতে দেশে নির্মাণাধীন মেগা প্রকল্পগুলো গতি হারাবে, যা মোটেই কাম্য নয়। উল্লেখ্য, বর্তমানে মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানির খনি থেকে পাথর উত্তোলন করছে বেলারুশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)। চুক্তি অনুযায়ী, পাথর উত্তোলনের জন্য মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানি লিমিডেট কর্তৃক যাবতীয় মেশিনারিজ, ইক্যুইপমেন্ট ও বিস্ফোরক জোগান দেওয়া সাপেক্ষে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার ২০০ টন পাথর উত্তোলন করবে জিটিসি। তবে চাহিদা অনুযায়ী কমিশন না দিলে প্রায়ই নানা কৌশলে প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ ও ইক্যুইপমেন্টের জোগান বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানি লিমিডেটের একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এ চক্রের কারসাজিতে ইতঃপূর্বে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় ১১ মাসেরও বেশি সময় খনিতে উৎপাদন বন্ধ ছিল, যার ফলে অনূন্য ৬০০ কোটি টাকার পাথর উত্তোলন সম্ভব হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, পাথর উত্তোলনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেড যথাসময়ে আমদানি না করার পেছনেও রয়েছে এ চক্রের স্বার্থসিদ্ধির প্রয়াস, যা শক্তহাতে রোধ করা উচিত বলে মনে করি আমরা। খনি থেকে পাথর উত্তোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিস্ফোরকের অভাবে খনির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানা থাকার পরও কেন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো না, তা খতিয়ে দেখা উচিত। বস্তুত ব্যক্তিবিশেষ বা গোষ্ঠীস্বার্থের শিকার হয়ে দেশের একমাত্র খনির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। অভ্যন্তরীণ বাজারে বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার পাথরের চাহিদা থাকায় সূচনাকাল থেকেই খনি উত্তোলনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানি লিমিডেটের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা ছিল; অথচ এ ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও সীমাহীন অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিষ্ঠানটির ললাটে ‘লোকসানি’ তকমা জোটেছে, যা মেনে নেওয়া কষ্টকর। দুর্নীতি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক অধিকার অর্জনে বড় বাধা, যা রক্ষায় সরকারের আন্তরিক ভূমিকা কাম্য হলেও দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এ ব্যাপারে কার্যকর ও দৃশ্যমান শক্ত কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে না। সময়মতো পাথর উত্তোলনের কাঁচামাল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেড আমদানিতে গড়িমসির সঙ্গে সম্পৃক্ত চক্রটিকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূলে সরকার আরও কঠোর হবে, এটাই প্রত্যাশা।