জাতিসংঘের জরুরি অধিবেশনের ভোটাভুটিতে বাংলাদেশ নিরপেক্ষতা বজায় রাখায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের জরুরি অধিবেশনে ভোটাভুটির আগে বাইরের প্রবল চাপ সত্ত্বেও বাংলাদেশ নিরপেক্ষতা বজায় রাখায় আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকাস্থ রাশিয়া দূতাবাস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২ মার্চ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের জরুরি অধিবেশনে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ওপর রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব তোলা হয়। ওই প্রস্তাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে বাংলাদেশ।
আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি বলেন, ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা শুধু রাশিয়া একা নয়, বাংলাদেশসহ দেশটির মিত্রদের জন্যও হুমকি তৈরি করেছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে নির্বিঘেœ মহামাত্রিক সহযোগিতা এগিয়ে নিতে ঢাকা ও মস্কোর মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা ও লেনদেন অব্যাহত রাখতে বার্টার বাণিজ্যের পাশাপাশি তৃতীয় দেশের ব্যাংকিং সুবিধা গ্রহণের মতো নানা বিকল্প নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।
রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশ-রাশিয়ার অর্থনৈতিক সহযোগিতায় প্রভাব পড়বে কিনা এমন এক প্রশ্নের উত্তরে মান্টিটস্কি বলেন, আমরা বুঝতে পারি, বর্তমান পরিস্থিতির কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সব কাজ নির্ধারিত সময় ধরেই এগোচ্ছে। কাজেই প্রকল্প শেষ করার জন্য আগে যে সময়সীমা ঠিক করা হয়েছিল, সে অনুযায়ী তা হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য কমানো নয়, বাড়াতে আগ্রহী মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে পশ্চিমা অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের সরকারের চাপে রাশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের অংশীদারদের জন্য অবিশ্বস্ত অংশীদারেরা দূরে সরে গিয়ে এক দারুণ সুযোগ তৈরি করেছে।
রাশিয়া থেকে কেনা গম ও জ্বালানির দাম বাড়ার ব্যাপারে এক প্রশ্নের উত্তরে মান্টিটস্কি বলেন, একটা বিষয় স্পষ্ট করেই বলছি, সরবরাহের বিষয়ে রাশিয়ার যে বাধ্যবাধকতা, সেটা পূরণ করা হবে। বাড়তি চাহিদা নিয়ে মধ্যস্বত্বভোগী ও কিছু গণমাধ্যম জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়ায় এখানে পণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে। রাশিয়া ও বেলারুশের ওপর সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বজুড়ে সারের মূল্য ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। সারা বিশ্বে পটাশ সারের প্রধান জোগানদাতা রাশিয়া ও বেলারুশ, যা কৃষির অন্যতম প্রধান উপাদান।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের এক মাস পূর্ণ হলো। এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের নির্দেশের পর ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়ান সেনারা। এ অভিযানের অংশ হিসেবে স্থল, আকাশ ও জলপথে ইউক্রেনে হামলা চালানো হচ্ছে। অভিযান শুরুর পর ইউক্রেনের সেনাবাহিনীও প্রতিরোধের চেষ্টা চালাচ্ছে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছে। এ ছাড়া ইউক্রেনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাশ্চাত্যের বেশ কয়েকটি দেশ মস্কোর ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে।