বাজারে নিত্য পণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে শিক্ষা উপকরণের দামও। বই, খাতা, কলম, পেন্সিল, ই-রেজার, স্কেল, জ্যামিতি বাক্স, মার্কার কলম সহ সব কিছুর দামই বেড়েছে। শুধু তাই না, শিক্ষাঙ্গনে যাওয়া আসা বা হালকা টিফিনের ব্যয়ও বাড়তি। এমন অবস্থায় অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বিপাকে পড়েছেন। যেখানে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা কঠিন সেখানে শিক্ষা ব্যয় নির্বাহ করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। করোনার আঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সব দেশেই মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে। যা জীবন যাত্রায় এক নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে। সরকার ব্যয় সংকোচনের নীতি গ্রহণ করে অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ ঘোষণা করেছে। অতি জরুরি প্রকল্প ছাড়া এখন সরকার নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক।
ব্যয় কমানোর অজুহাতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ‘ কিশোর কিশোরী ক্লাব’ স্থাপন প্রকল্প থেকে শিশুদের নাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ক্লাবে শিশুদের উপস্থিতি কমে গেছে। গান, আবৃত্তি, করাতে সহ নানা সৃজনশীল বিষয় শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে দেশের সব জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে কিশোর কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হয়েছিল। একই ভাবে বন্ধ করা হয়েছে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ‘উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয় বর্ধক (আই জি এ) প্রশিক্ষণ প্রকল্প এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার ‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়। এ দু’ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ ও উঠান বৈঠক গত জুলাই থেকে বন্ধ রয়েছে। দু’টি সংস্থাই মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এবং তিনটি প্রকল্পই সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত হয়।
নাস্তা, প্রশিক্ষণ ও উঠান বৈঠক বন্ধ হলেও প্রকল্পের অন্যান্য কাজ, জনবলের ভাতা সুবিধাদি চালু রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এসব প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কমিয়ে ব্যয় সাশ্রয় অর্থহীন। এবং শিশুদের নাস্তা বন্ধ অবিবেচক সিদ্ধান্ত। শিশুদের সুকুমার বৃত্তি উন্নয়নে সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ জরুরি। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোয় এখন সংস্কৃতি চর্চা প্রায় নাই বললেই চলে। এমন অবস্থায় কিশোর কিশোরী ক্লাব প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত আশাব্যঞ্জক হলেও সৃজনশীল কর্মমান্ডে এখন অনেকেই অংশ নিতে পারছে না। আর নারী ক্ষমতায়নের ব্যাপারে সবাই মুখে বড় বড় কথা বললেও বাস্তবে তা অনেকেই চান না। কাজেই তিনটি বিষয় নিয়েই নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া এখন জরুরি। কারণ এই সংকটের সময় অনেক সরকারি অর্থ বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে।
দেশের বাজারের যে অবস্থা, তাতে যে কোনো পণ্যের মূল্যই ঊর্ধ্বগতি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ সুযোগে টু পাইস কামিয়ে নেবার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দু:খ জনক হলেও সত্য বাজার নিয়ন্ত্রণের তেমন কোনো জোরালো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। কাজেই শিক্ষা উপকরণের দাম নিয়ন্ত্রণেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষা নাগরিক অধিকার। সে অধিকার কোনো অবস্থায় খর্ব করা যাবে না। নিত্যপন্যের দাম নিয়ন্ত্রণ সহ শিক্ষা উপকরণের দাম নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। সরকার কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাস্তবে তা কেউ মানছেন না। সরকার ও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরকারকে আরো কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। এবং তা যতদ্রুত সম্ভব, ততোই মঙ্গল।