আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। যে জাতী শিশুর প্রতি মনোযোগী নয় যে জাঁতি কোন দিন বড় হতে পারে না। প্রতিটা শিশুই নাকি দেশ ও জাতির অগ্রনায়ক। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে অনেক ছিন্নমূল শিশুরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই ওরা অনাদর, অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার হয়েছে। রাস্তার পাশে জেগে উঠা আবর্জনার স্তূপ, বাস টার্মিনাল-রেলস্টেশন এখানে-সেখানে নোংরা অপরিচ্ছন্ন স্থানটুকুই আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নেয় তারা। কাগজ কুড়ানো কিংবা ভিক্ষাবৃত্তি, টোকাই দিয়েই ওরা জীবন শুরু করে। সব্যসাচী মানুষের ধিক্কার, চড়-থাপ্পড়সহ নানা শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে হয় প্রতিনিয়ত। ওরা যেন সমাজের সর্বোচ্চ অবহেলিত মানুষ। মৌলিক অধিকার গুলো থেকে বঞ্চিত দেশের এ দরিদ্র, অসহায় পথশিশুরা। অযতœ, অবহেলা, উপযুক্ত পরিবেশ ও শিক্ষা সুযোগের অভাবে তারা যেন ঝরে পড়ে যাচ্ছে। তবে তাদের দিকে একটু সজাগ দৃষ্টি রাখলে হয়তো তারাও সুন্দর-সুষ্ঠ্য একটি পূর্ণ জীবন পেতে পারে।
শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে জাতীয় সমৃদ্ধি নির্ভরশীল। বিভিন্ন কারণে পথ শিশুদেরও রয়েছে শিক্ষার প্রয়োজন। তাই পথশিশুদের শিক্ষার ব্যাপারে শুধু সরকারী কার্যক্রম নয় আমাদেরকে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। তারা যেন কুসংস্কার, অন্যায়, জড়তা ও হীনতা থেকে মুক্ত হয়ে সত্যিকারের মানুষ হতে পারে। তবে শিক্ষার আগে ‘পথশিশুদের থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা করা দরকার'। শিক্ষার পাশাপাশি বাসস্থান, নিরাপত্তা ও খাদ্যের অধিকার থাকলেও কোনো অধিকারই তারা যেন পাচ্ছে না। বাসস্থানের অভাবে রাস্তা-ঘাটে বসবাসের ফলে তাদের ওপর শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এর চেয়েও বেশি হচ্ছে মাদক এবং নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে শিশুদের জড়ানো হচ্ছে। তাই সার্বিক ভাবেই ভয়াবহ থেকেও ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছে পথশিশুরা।
পথশিশুদেরকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। পথশিশু একটি আমাদের জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যে ভাবেই হোক এ জাতীয় সমস্যা সমাধানের সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। পথশিশুদের শিক্ষার জন্য অনেক বেসরকারি সংস্থাও কাজ করে যাচ্ছে। তবে তা অপর্যাপ্ত। বিভিন্ন কারণে ঢাকা শহর ছাড়াও অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে ভাসমান শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। এসব পথশিশুদের সমাজের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি নাগরিক হিসেবে আমাদেরও কর্তব্য রয়েছে। আমরা উন্নত দেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছি,সেই স্বপ্ন পূরণ করতে হলে আমাদের এই বিপুল পথশিশুদেরকে অবশ্যই লেখাপড়া করা এবং তাদের আর দশটা শিশুর মতোই বড় করে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলে হয়তো আর একটা নির্দিষ্ট সময় পর পথশিশু নামক কোনো শব্দ বাংলাদেশে থাকবে না। এবং আজকের শিশুই হবে আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।