ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে দেশে ব্যাপক আলোচনা হলেও অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয় নি। কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া বা গোদরোগ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার যে সফলতা দেখিয়েছে, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেনি। কারণ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বা কর্মকৌশল নেই। ফলে সময়ের ব্যবধানে ডেঙ্গুর ধরন পালটিয়ে এখন চারটি ধরন হয়েছে। ডেন-১ ডেন-২ ডেন-৩ ও ডেন-৪ ধরনের ডেঙ্গুর তিনটি একই সাথে এবছর সক্রিয় হতে দেখা যায়। যা আগে দেখা যায় নি। ফলে আক্রান্ত রোগীদের পরিস্থিতি খারাপের দিকে চলে যায়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে২০২২ সালে। বিগত বছরটিতে ২৮১ জন মারা গেছে ডেঙ্গুতে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা বলছে, এদের মধ্যে ৬৭ জন শিশু। ১৮ বছরের নিচের মৃত ব্যক্তিদের প্রয় এক চতুর্থাংশ। রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার মতে গত বছর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। যার মধ্যে শিশুর সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৯৭২ জন। ২০০০ সালে দেশে প্রথম বড় আকারের ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। তারপর থেকে ডেঙ্গু বাহক এডিস মশা নিধন ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় নি। সারা দেশ ডেঙ্গু ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। যা চলমান নতুন বছরেও অব্যাহত আছে।
ডেঙ্গুর ধরন পরিবর্তন হওয়ায় রোগ সর্ম্পকে বুঝে উঠতেও সসময় চলে যায়, অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মৌসুমি সর্দি জ্বরে, আবার কেউ কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু অনেকেই তা গুরুত্ব দেন নি। ফলে ঠিক সময়ে পরীক্ষা করানো হয়নি। পরীক্ষায় যখন ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত হয়, তখন পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়ে পড়ে। রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার একটি পর্যালোচনায় দেখা যায়। ৬৪ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মধ্যে। অর্থাৎ খুব জটিল পরিস্থিতি তৈরি হবার পর তাদের হাসপাতালে আনা হয়েছে।
এবার ডেঙ্গুতে যে ৬৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে তার মধ্যে ১৬ শিশু বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটে। সেখানকার চিকিৎসকরা বলছেন, এক্সপ্যানডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম’ নিয়ে শিশুরা হাসপাতালে আসার আগেই তাদের অঙ্গ-পতঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে আনার আগে তাদের সঠিক চিকিৎসা করা হয়নি বা কোর চিকিৎসা দেওয়া হয় নি।
এডিস মশার কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। তাই প্রতিবছর সুনির্দিষ্ট সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মশা জরিপ করে। আর ডেঙ্গু দেখা দিলে সিটি করপোরেশন মশা মারার ওষুধ ছিটায়। প্রতি বছর একই চিত্র দেখা যায়। মশাও নিয়ন্ত্রণ হয় না। ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে মানুষও বাঁচে না। তাই পাঁচ বা দশ বছর মেয়াদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এডিস মশা মারার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। কিন্তু তা নিয়ে কেউ ভাবে না। সময় এসেছে ডেঙ্গু নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার। প্রয়োজনে বিশেষ সংস্থাকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। বছর বছর এত গুলো মানুষ ডেঙ্গুতে মরবে, তাদের বাঁচাতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া তো যেতেই পারে। আমরা আশা করবো, সরকার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিশেষ উদ্যোগ নেবে। সাথে নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে ডেঙ্গু বাহিত এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে।