চাহিদা ও জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারছে না রেল। এর অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো টিকেট কালোবাজারি। এটি বন্ধ করতে নানা সময়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কাজে আসেনি কোনোটাই। এর আগে একবার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে যাত্রীদের টিকেট কাটা বাধ্যতামূলক করা হলেও উদ্যোগটি অল্পদিনেই মুখ থুবড়ে পড়ে। এখন আবার রেলের টিকেট কালোবাজারি রোধ ও টিকেট ছাড়া ভ্রমণকারীদের জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) যাচাই বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে টিকিটিং ব্যবস্থায় তিনটি সেবা অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে। এসব সেবা আগামী ১ মার্চ থেকে কার্যকর হবে। এ সেবা ৩টির মধ্যে রয়েছে- জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের মাধ্যমে রেলওয়ের আন্তনগর ট্রেনের টিকিটিং ব্যবস্থা, টিকেট চেকিং ব্যবস্থায় পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) মেশিনের প্রবর্তন এবং অনলাইনের মাধ্যমে কেনা টিকেট অনলাইনে ফেরতের ব্যবস্থা করা। এগুলো নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। তবে ‘টিকেট যার, ভ্রমণ তার’ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে আন্তনগর ট্রেনের টিকেট কেনার আগে প্রত্যেক যাত্রীকে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা জন্মনিবন্ধন সনদ যাচাই করে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক করেছে। কাউন্টার, অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকেট ক্রয়কারী যাত্রীরা অনলাইন অথবা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে যেকোনো সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিটিং সিস্টেমে নিবন্ধন করতে পারবেন। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। বলা হচ্ছে, ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী যাত্রীরা বাবা বা মায়ের নাম ও এনআইডি দিয়ে নিবন্ধনকৃত রেলওয়ে অ্যাকাউন্ট অথবা জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে ও জন্মনিবন্ধন সনদ আপলোড করার মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পৃথক/এককভাবে টিকেট কিনতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে টিকিটের ওপরে মুদ্রিত নামের সঙ্গে যাত্রীর সম্পর্ক যাচাইয়ের জন্য ভ্রমণকালে বাধ্যতামূলকভাবে জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি সঙ্গে রাখতে হবে। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন রয়েছে, সেটি হলো যাত্রপথে এগুলো যাচাই করা কতখানি সম্ভবপর হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও জনবলের ব্যবস্থা করার সক্ষমতা কতখানি রয়েছে সেটিও দেখার বিষয়। পরিচয়পত্রের সঙ্গে টিকিটের ওপর মুদ্রিত যাত্রীর তথ্য না মিললে যাত্রীকে বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে অভিযুক্ত করা হবে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে। এখানেও একটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে যে, কোনো যাত্রী জরুরি প্রয়োজনে টিকেট করতে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে এনআইডি কার্ড সঙ্গে রাখতে না পারলে কি করবে? যেহেতু এনআইডি কার্ডের তথ্যে আঙুলের ছাপও সংরক্ষিত থাকে, সেক্ষেত্রে এনআইডি ছাড়া শুধু আঙুলের ছাপ দিয়ে টিকেট কাঁটার ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেটিও ভেবে দেখা যেতে পারে। রেল যাত্রীদের সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘টিকেট যার, ভ্রমণ তার’ শীর্ষক স্লোগানকে সামনে রেখে এবং বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ রেলওয়ে টিকেটিং ব্যবস্থায় যেসব পরিবর্তন আনছে সেগুলো নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী। তবে উদ্যোগগুলো সুচারুরূপে বাস্তবায়নে সক্ষমতা কতটুকু আছে, সেটিও প্রশ্ন। আমরা এর আগে অব্যবস্থাপনার বহু নজির দেখেছি। আমরা আশা করি এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যথাযথ দৃষ্টি দেবে।