তথ্য আদান-প্রদানে মোবাইল ফোন বদলে দিয়েছে শহর ও গ্রামের মানুষের জীবন। পৃথিবীতে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ-মাধ্যম হিসেবে মোবাইল কার্যত বিপ্লব ঘটিয়েছে। এই ডিভাইস কয়েক সেকেন্ডেই পৃথিবীর এক প্রান্তের খবর অন্যপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে, অনেকেই আয় রোজগার করছেন, পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। মোবাইলে তথ্য ভাণ্ডার বিখ্যাত বইয়ের ই-বুক দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ই-বুক লাইব্রেরী। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেবার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আজকাল ঘরে বসে বাজার ও কেনাকাটায়ও মোবাইল ব্যবহার করা হচ্ছে। বিজ্ঞানের বদৌলতে বলতে গেলে মোবাইল মানুষের যাপিত জীবনের অতিপ্রয়োজনীয় একটি অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু অপরদিকে এই সুবিধাগুলোর বিপরীতে নতুন প্রজন্মের মোবাইলের মাধ্যমে প্রযুক্তির অপব্যবহার পুরো জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে। অতিপ্রয়োজনীয় মোবাইলের অপব্যবহার দেশের নতুন প্রজন্মকে যেন ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর ৮৬ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। তাদের মধ্যে ৭২ শতাংশের বেশি তরুণের ইন্টারনেট সুবিধা আছে। মানুষের মধ্যে ত্বরিত যোগাযোগের প্রতিশ্রুতির নাম সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম। তবে অনেক তরুণ-তরুণীর কাছে এটি এখন ভিন্ন কিছু। এর কারণে তরুণদের মধ্যে বাড়ছে একাকীত্ব। আগে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে ছাত্রছাত্রী, তরুণ-তরুণীদের মেধার বিকাশ ঘটত। এখন লাখ লাখ কম বয়সী ছেলেমেয়ের দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে মোবাইল নিয়ে। হাট-মাঠ-ঘাট, রাস্তার মোড়, গলিপথ এমনকি বাসা-বাড়িতেও দেখা যায় নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ব্র্যাক পরিচালিত দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ পরবর্তী কর্মসংস্থানের বিষয়ে তরুণদের ধারণা শীর্ষক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতিকালে মাত্র ২৮ শতাংশ তরুণ কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুসন্ধান করেছেন। জরিপে দেখা গেছে, ৬৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী তরুণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে কার্যকর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে মনে করেন। ২০১০ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, আট থেকে ১৮ বছর বয়সীরা দিনের সাড়ে সাত ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় করছে স্মার্টফোনের পিছনে। ২০১৫ সালে এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ২৪ শতাংশ কিশোর প্রায় সবসময়ই অনলাইনে থাকে। তরুণদের এই স্মার্টফোনে আসক্তি দেশ ও জাতীর ভবিষ্যতের জন্য হুমকি স্বরূপ। একটি বেসরকারি পর্যায়ের জরিপে দেখা গেছে, বাবা-মায়েরা চাকরি করেন তাদের সন্তান মোবাইল আসক্তিতে বেশি ভুগছে তাই এর থেকে মুক্তি পেতে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে অভিভাবকদের। তরুণদের যতটা সম্ভব স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখতে হবে। কিশোর বয়সীরা যাতে দিনে কোন ভাবেই এক থেকে দেড় ঘণ্টার বেশী স্মার্টফোন না ব্যবহার করে, সেদিকে অভিভাবকদের নজর রাখতে হবে। সর্বোপরি আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে তরুণরা স্মার্টফোনের আসক্তি থেকে বের হয়ে জাতীয় জীবনের মূল চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়।