পরিবহন খাতে এ মুহূর্তে সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করে প্রাণহানি কমানো। কিন্তু সড়ক পথের দুর্ঘটনা কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না। ফলে প্রতিবছর আশঙ্কাজনক বাড়ছে এই মৃত্যুর হার যার প্রধান অন্তরায় হলো সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন। অবৈধ এসব যান চলাচল যেমন রোধ করা যাচ্ছে না, সেই সঙ্গে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার ব্যাপকতাও বাড়ছে দিন দিন। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ। এসব দুর্ঘটনায় কেউ মারা যাচ্ছেন আর যারা বেঁচে ফিরছেন তাদের অনেককেই পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হচ্ছে সারাজীবনের জন্য। ফলে একসময় তিনি পরিবার তথা সমাজের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছেন। আবার আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে এ খাতকে সুশৃঙ্খল রাখার ব্যবস্থাও কার্যকর নয়। সেখানে বড় বাধা রাজনৈতিক প্রভাব। ফলে শত শত অবৈধ যানবাহনের চালক প্রতিদিন বিধি নিষেধ অমান্য করে অবৈধ যান নিয়ে সড়ক মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। রাস্তায় অবৈধ যানবাহন চলাচলের কারণে পরিবহন সেক্টরে নেমে এসেছে অশনিসংকেত। সড়কগুলো পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। সড়ক এখন শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ অবৈধ যানবাহনের দখলে চলে গেছে। অবৈধ যানের চালকরা ট্রাফিক আইন ও সংকেত না মানার করণে বৈধ যান চালকদের নানামুখী বিপদ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও দেশের প্রধান মহাসড়কগুলোতে প্রায় অবাধে চলছে তিন চাকার বিভিন্ন যানবাহন। এসব বাহনের কারণে মহাসড়কে দ্রুতগতির বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, ঘটছে দুর্ঘটনা। সরকার ২০১৫ সালে দেশের ২২টি মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর হাইকোর্ট ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে দেশের সব প্রধান মহাসড়কে তিন চাকার যান না চালানোর আদেশ দিয়ে সেই নিষেধাজ্ঞা আরো জোরদার করেন। এদিকে অবৈধ নছিমন, করিমন, আলমসাধু ও ভটভটিতে মালামাল টানার কারণে ট্রাক ও বাসের আয় রোজগার কমে এসেছে। বাসের পরিবর্তে যাত্রীরা এখন অটোভ্যান, নসিমন, আলমসাধু, ভটভটি, অটো রিক্সা, ইজিবাইক, থ্রিহুইলার ও লেগুনায় যাতায়াত করছে। বিআরটি এর এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দেশে ৩৮ লাখ যানবাহন চলছে। এর মধ্যে ফিটনেস-বিহীন যানবাহনের সংখ্যা ৫ লাখের কাছাকাছি। একই সূত্রমতে, দেশে বিভিন্ন শ্রেণির যানবাহনের জন্য চালক আছেন প্রায় ২০ লাখ। যাদের অধিকাংশেরই নেই পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা ও ড্রাইভিং লাইসেন্স। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের প্রয়োগ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ চালক এবং সড়কে চলাচল উপযোগী ভালো মানের যানবাহন অবশ্যই প্রয়োজন। তবে একইসঙ্গে জনগণকেও হতে হবে সচেতন। শুধুমাত্র তাহলেই এই সড়ক পথে অবৈধ যানবাহন তুলনামূলক ভাবে কমিয়া আনা সম্ভব হবে।