ক্যানসার একটি দীর্ঘমেয়াদি ও প্রাণঘাতী রোগ। তবে সময়মতো ও সঠিক চিকিৎসা পেলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশে ক্যানসারে মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে সচেতনতা ও শিক্ষার অভাব। সেই সঙ্গে দেশের মানুষের নাজুক আর্থিক অবস্থাও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্বের। বিশ্বে প্রতিবছর ৮২ লাখের বেশি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দেশে কত মানুষ ক্যানসার আক্রান্ত এবং কোন ধরনের ক্যানসারে ভুগছে, তার নির্ভরযোগ্য কোনো পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো দপ্তরে নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ ২০২০ সালে অনুমিত হিসাব অনুযায়ী, বছরে ১ লাখ ৫৬ হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। আর প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। সর্বশেষ পাঁচ বছরে দেশে মোট ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার ৮৬৬ জন। সরকারি পর্যায়ে বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, সাভারে পরমাণু শক্তি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা হয়। এই চার কেন্দ্রে একবার পরীক্ষা করতে ২৫ হাজার টাকা লাগে। বেসরকারি পর্যায়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল, এভারকেয়ার হাসপাতাল ও মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ পরীক্ষা হয়। অর্থাৎ আধুনিক চিকিৎসার এ সুযোগ শুধু ঢাকায়। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বুধবার পেট-সিটি স্ক্যান হয়। একেকটি কেন্দ্রে সপ্তাহে ২০ থেকে ৩০ জনের এ পরীক্ষা হয়। সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১৮০ জনের এ পরীক্ষা করানো হচ্ছে। অর্থাৎ বছরে ৯ হাজারের কিছু বেশি মানুষ এ পরীক্ষার সুযোগ পাঁচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড বলছে, প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি সমন্বিত ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র থাকা দরকার। সমন্বিত ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্রের অর্থ হচ্ছে প্রয়োজনীয় জনবলসহ এসব কেন্দ্রে ক্যানসার শনাক্ত ও পরীক্ষার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা, সব ধরনের থেরাপি (কেমো ও রেডিও থেরাপি) ও অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা থাকবে। বাংলাদেশে এমন কেন্দ্র থাকা দরকার ১৭০টি। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এমন কেন্দ্র আছে ৩৩টি। এর মধ্যে পেট-সিটির সুযোগ আছে কেবল সাতটি প্রতিষ্ঠানে। সরকারিভাবে প্রথমে অন্তত সাতটি বিভাগীয় শহরে পেট-সিটি পরীক্ষার উদ্যোগ নিলে অনেক বেশি রোগী রোগ শনাক্তের এ আধুনিক সুযোগ পাবে। ঢাকার বাইরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোও এমন উদ্যোগ নিলে ঢাকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ কমবে। তাই এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা