বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই দেখা দিয়েছে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি। নিত্যপ্রয়োজনীয় মৌলিক পণ্যসহ সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। আমিষ-জাতীয় খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে গরিবের আমিষ ঘাটতি দেখা দেয়ার শঙ্কা করা হচ্ছে। কেবল আমিষের ক্ষেত্রে এমন ঘটছে তা নয়; চাল, ডাল, আটা, ময়দা ও সয়াবিনসহ অন্য সব নিত্যপণ্য। বাজারে চালের দাম এখনো উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি, কাঁচামাল ও খাদ্যের উচ্চ মূল্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে ডলারের বর্ধিত দাম। তবে এই মূল্যস্ফীতির চাপ সামলানোর ক্ষমতা নেই সাধারণ মানুষের। বেঁচে থাকার লড়াইয়ের এই সময়টাতে অনেকে খাদ্যতালিকা থেকে আমিষ বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন। শুধু তাই নয়, জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় সামলাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এ ছাড়া যাতায়াত ভাড়া এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির মতো বিভিন্ন সেবা মূল্যের বাড়তি ব্যয় জীবন-যাপন আরও কঠিন করে তুলেছে। এ সময়ে শিশুখাদ্য থেকে শুরু করে শিক্ষার উপকরণ, খেলনাসহ এমন কিছু নেই যার দাম বাড়েনি। তবে বিশ্বব্যাংক থেকে জানা যায়, গত বছর ২০২২ সাল থেকে সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের দরবৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ, খাদ্য নিরাপত্তা, বৈশ্বিক উঞ্চতাসহ নানাবিধ যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে, তাতে গত ৫০ বছরে সবচেয়ে বেশি সংকটে রয়েছে বিশ্ব। বাংলাদেশের জন্য এ সংকট আরও বেশি।
আমদানি ব্যয় সামাল দিতে গিয়ে দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ। চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি থাকায় গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চমূল্য ছাড়াও শুধুমাত্র টাকার অবমূল্যায়নের কারণে সব আমদানি পণ্যের দাম অতিরিক্ত ২৪ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি আমাদের দেশে গরিবের আমিষ পাওয়ার প্রধান উৎস। কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে এখন প্রতি কেজি ২২৫-২৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তার সাথে সোনালি মুরগির দামও কেজিতে বেড়েছে ৪০-৫০ টাকা। দেশী মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫০-৫৫০ টাকায়। গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০-৭৫০ টাকায়; আর খাসির গোশত এক হাজার ১০০ টাকায়। এদিকে ডিমের দামও বাড়তি। রুই মাছ মানভেদে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। চাষের তেলাপিয়া ও পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার আশপাশে। মোটা চালের দাম বেড়েছে ২ শতাংশের উপরে। আর সরু চালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশের মতো। সামনে আসছে রমজান। এমন সময়ে ছোলা ও ছোলার ডালের দাম বাড়ছে। মসুর ডালের দাম প্রতি কেজি ১০০-১৪০ টাকা। সয়াবিন তেল ১৯০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে নতুন করে খোলা চিনি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে বাজারে উধাও হয়ে গেছে প্যাকেটজাত চিনি। ভোক্তাদের চিনি কিনতে হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায় ও লাল চিনি ১৫০ টাকার আশপাশে। এক কথায় সব কিছু সাধারণের সামর্থ্যরে বাইরে চলে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে এবার বাজারে সরকারি তৎপরতা কম দৃশ্যমান হচ্ছে। সরকার এখনো ভোক্তাবান্ধব বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। ফলে সাধারণ মানুষের টাকা হাতিয়ে নিতে পারছেন এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাই গরিববান্ধব একটি বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে অতিরিক্ত দামেই সাধারণ মানুষের পণ্যসামগ্রী কিনতে হবে। খাদ্যপণ্য আমদানি ত্বরান্বিত ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে হবে, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হিসাবে কৃষিজমির অকৃষি খাতে স্থানান্তর যথাসম্ভব বন্ধ এবং খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে হাতে নেওয়া কর্মসূচিগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে হয়তো দুর্ভিক্ষের থাবা থেকে যথাসম্ভব দেশের মানুষকে বাঁচানো যাবে।