সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলির কার্যক্রমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে দেশে প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছে ডিজিটাল বদলির ব্যবস্থা। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। অনলাইনে বদলির ক্ষেত্রে সেই পুরোনো অভিযোগই পাওয়া গেছে। অথচ এসব সমস্যা দূর করার উদ্দেশ্যেই কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীতিমালা অনুযায়ী যার অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা, তিনি বদলির সুযোগ পাননি, পেয়েছেন অন্যজন। অভিযোগ উঠেছে, আগের মতো এখনো ধরনা না দিলে বদলির সুযোগ মিলছে না; যিনি যোগাযোগ করতে পেরেছেন, তারই বদলি হয়েছে। আবার অনেকে বলছেন, বদলির জন্য যে সফ্টওয়্যার তৈরি করা হয়েছে, সেটিতেই রয়েছে সমস্যা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, সফ্টওয়্যারে কোনো ত্রুটি নেই, এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব বিশ্লেষণ করে বদলির আদেশ তৈরি করে দেয়। কাজেই দেখা যাচ্ছে, অনলাইনে বদলির কার্যক্রম চালু করা হলেও এটি সব জায়গায় সঠিকভাবে কাজ করছে না। এ ক্ষেত্রে সমস্যাটি কোথায় তৈরি হচ্ছে এবং সমস্যা তৈরির পেছনে কেউ আছে কিনা, তা চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বদলির ক্ষেত্রে শিক্ষকদের হয়রানি আর উৎকোচ বাণিজ্যের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। জানা গেছে, একশ্রেণির অসাধু শিক্ষা কর্মকর্তা বদলি মৌসুমের অপেক্ষায় থাকেন সারা বছর। বছরের শুরুর তিন মাস অর্থাৎ জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ এলে তারা হয়রানির দুয়ার খুলে বসেন। অন্যদিকে হয়রানি ও ঘুসের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে অনেক শিক্ষক প্রভাবশালী মহলে তদবির করেন। এছাড়া কাক্সিক্ষত বা লোভনীয় স্থানে বদলির জন্য তদবির বাণিজ্য বা প্রভাবশালীদের চাপ সৃষ্টির ঘটনা তো আছেই। বস্তুত বদলির জন্য সুপারিশ, যোগাযোগ, অনুরোধ, আবেদন, সাক্ষাৎ এগুলো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এতে পাঠদান কার্যক্রম যেমন বিঘিœত হয়, তেমনি শিক্ষকরাও ঠিকমতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারেন না। এসব সমস্যা নিরসনের উদ্দেশ্যে গত বছর চালু করা হয় অনলাইনে বদলি কার্যক্রম। আশা করা হয়েছিল, নতুন এ পদ্ধতির কারণে শিক্ষকদের আর কারও কাছে যেতে হবে না। বদলির জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না। অর্থাৎ বন্ধ হবে হয়রানি। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। অন্য সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যবস্থার সুফল পাচ্ছে মানুষ, তাহলে শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে কেন পাবে না? নিশ্চয়ই কোথাও ত্রুটি রয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষকে এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ত্রুটি সারিয়ে তুলে কার্যক্রমকে গতিশীল করতে না পারলে ডিজিটালাইজেশনের সুফল মিলবে না।